মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিকৃত বক্তব্যের অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কার্যক্রমের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
খালেদার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (২৯ মার্চ) বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এন এন বসির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
খালেদার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়া কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন।
আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।
পরে মাহবুব উদ্দিন বলেন, এ মামলা চলতে পারে না। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সংখ্যা নিয়ে কোনো বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মধ্যে পড়ে না। এছাড়া মামলাটি রাষ্ট্র করেনি, করেছেন ব্যক্তি। এ কারণে আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ নিয়ে রুল জারি করেছেন।
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। আজকে বলা হয়, এতো লাখ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া দাবি করেন, ‘তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না’।
এরপর ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ‘দেশদ্রোহী’ মনোভাব পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে তা প্রত্যাহার করতে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।
নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান তিনি।
পরে ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২৪ জানুয়ারি এ অনুমোদনের চিঠি হাতে পেয়ে ২৫ জানুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। ওইদিন খালেদা জিয়াকে ৩ মার্চ হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছিলেন আদালত। পরে একদফা সময় নিয়ে ১০ এপ্রিল সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন খালেদা জিয়া।
পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে আসে। ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট পুলিশের দেওয়া চার্জশিট আমলে নেন আদালত। ওইদিন হাজির হয়ে এ আদালত থেকেও জামিন নেন খালেদা। ১০ আগস্টের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।