ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপথে নেওয়া ঠেকাতে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদ থেকে ছাত্রসমাজকে মুক্ত রাখতে হবে। তারা যেন কোনো জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে। জঙ্গিরা শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের বিপথে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে শিক্ষক-অভিভাবক সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ যেন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, সে জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে এদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে আমরা পদক্ষেপ নিই। শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য ছিলো। তিনি বলেন, এলাকা ধরে ধরে নিরক্ষরতা মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলাম।
বুধবার (০৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দু’টি স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ স্থাপনা দু’টির কাজের উদ্বোধন করেন। এসময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এ স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। তার বিরুদ্ধে একের পর মামলা দেওয়া হয়েছে। তারপরও তিনি জনগণের কথা বলেছেন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন।
তিনি বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। যারা ক্ষমতা দখল করেছিলো তারা দেশের মানুষের কথা ভাবেনি। নিজেদের ভাগ্য বদলের কথা ভেবেছে। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে এদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে পদক্ষেপ নিই। শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য ছিলো। এলাকা ধরে ধরে নিরক্ষরতা মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলাম।
রংপুর অবহেলিত এলাকা ছিলো সব সময় এবং এখানে মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ সব সময় লেগেই থাকতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যখনই ক্ষমতায় এসেছি, লক্ষ্য ছিলো উন্নয়ন করা। আমরাই রংপুরকে বিভাগ করি। মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা ছিল পায়রা বন্দরে। কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থী পাওয়া কঠিন, তাই রংপুরে করার সিদ্ধান্ত নিই। ছাত্রী হলের জন্য একনেকে ৬০০ আসনের প্রস্তাব এলে আমি ১ হাজার করে দিই। জানতাম ছাত্রী সংখ্যা বাড়বে। তাই গবেষণায় জোর দিয়েছি। এ ইনস্টিটিউট মানসম্মত শিক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। খাদ্য ঘাটতি পূরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। এখন আল্লাহর রহমতে মঙ্গা নাই। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছি। দুর্গম এলাকায় দেখেছি হাড্ডিসার মানুষ, এখন আর দেখা যায় না। বিভিন্ন ভাতা দিচ্ছি, কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি।
শিক্ষায় নতুন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সন্তান যারা উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় তাদের স্কলাশিপের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, যদি ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়তে চাই তাহলে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দরকার। আমাদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখবে, সমৃদ্ধ দেশ গড়বে।
জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ভাবেই যেনো জঙ্গিবাদ দানা বাঁধতে না পারে। আমরা দেখেছি বাসে- ট্রেনে আগুন দেওয়ার দৃশ্য। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই। কে ভালো কে খারাপ সেটা বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মানুষকে হত্যা করে বেহেস্তে যাওয়া যায় আমি বিশ্বাস করি না। শান্তিপূর্ণ দেশ আমরা গড়তে চাই। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। প্রকৃত শিক্ষা পেতে কেউ বিপথে যাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার কোনো চাওয়া নাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো বাঙলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, সে স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছি।
বেরোবির প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা গেছে, গবেষণার জন্য ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও মেয়েদের জন্য অত্যাধুনিক শেখ হাসিনা হলের বাজেট ২০১৫ সালের একনেকে পাস করা হয়েছিল। রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য ৫১ কোটি ২৩ লাখ ও মেয়েদের হলের জন্য ২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এ স্থাপনা দু’টির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।