শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪ ১৫ই আষাঢ় ১৪৩১
Smoking
 
পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ-অস্ট্রিয়া মতৈক্য
প্রকাশ: ১২:০০ pm ৩১-০৫-২০১৭ হালনাগাদ: ০৩:০২ pm ৩১-০৫-২০১৭
 
 
 


বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অস্ট্রিয়া সফরের শেষ দিন মঙ্গলবার ভিয়েনায় দেশটির ফেডারেল চ্যান্সেলর ক্রিস্টিয়ান কের্নের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই ঐকমত্য হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান। 

ভিয়েনা থেকে ঢাকা ফেরার পথে বিমানে শহীদুল হক প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

শহীদুল হক বলেন, “দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছেন দুই নেতা।”

স্বাধীতার পর গত সাড়ে চার দশকে এটাই ছিল বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম অস্ট্রিয়া সফর। তবে শেখ হাসিনা নিজে আগেও দুবার পশ্চিম ইউরোপের এই দেশে গেছেন।

মঙ্গলবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা জানান, ১৯৬৯ সালে প্রথমবার তিনি অস্ট্রিয়া গিয়েছিলেন পর্যটক হিসেবে। এরপর ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবে দ্বিতীয়বার অস্ট্রিয়া সফর করেন।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, ভিয়েনায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বন্ধের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সশস্ত্র জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা শেখ হাসিনা বৈঠকে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সামরিক চাপ প্রয়োগ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। বরং এর বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তারের নাগরিকদের সচেতন করতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়তে হবে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কারণ খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিদের অর্থায়ন এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে ‘যে কোনোভাবে’।

উদ্বাস্তু ও শরণার্থী সমস্যার বিষয়টি বৈঠকে উঠলে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত শরণার্থী সমস্যার সৃষ্টি করছে এবং এই পরিস্থিতিই সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে। 

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গও এ আলোচনায় আসে। প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলরকে জানান, প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন।

মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকার আপাতত তাদের আশ্রয় দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমাকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। 

কিন্তু এ বিষয়ে চোখে পড়ার মতো কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় নিজের অসন্তুষ্টির কথাও তুলে ধরেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের কথা বলেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলরকে।

বিশেষ করে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাকে খাতে বিনিয়োগের যে সুযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে ক্রিস্টিয়ান কার্নের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এক্ষেত্রে আরও অগ্রগতির জন্যই রাশিয়ার সহযোগিতায় এ প্রকল্প হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের আরও স্থাপনা নির্মাণে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।”

আরব-আমেরিকান সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের বিষয়ে বৈঠকে জানতে চান অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বন্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার বিষয়ে নেতারা কথা বলেছেন।

অস্ট্রিয়ার ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে দুই নেতার বৈঠকের পর নিয়মিত কূটনৈতিক আলোচনা আয়োজনে অস্ট্রিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ফেডারেল চ্যান্সেলারি থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে পাশেই অস্ট্রিয়ার ফেডারেল প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে যান শেখ হাসিনা।

সাক্ষাতকালে প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ফন ডের ব্যালন বলেন, সামরিক চাপ প্রয়োগ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূল উৎপাটন করা যাবে না। এর জন্য সামাজিক সচেতনতার দরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বৈঠকে অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি কমিশনের ৬০ বছর পূর্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি কমিশনের মহপরিচালক ইউকিয়া আমানোর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি কমিশনের অংশীদারিত্বের বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।  

আমানো বৈঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি কমিশনের চেয়াম্যান আগামী জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফর করবেন।

সে সময় তিনি পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও দেখতে যাবেন।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT