রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদে চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেছে ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকায় ‘পুলিশি বাধার প্রতিবাদে’ সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
রোববার দুপুরের আগে ওই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আগামী ২৩ ডিসেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে অবস্থান নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ-সমাবেশের পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়ম মুহম্মদ রেজাউল করীম বলেন, সরকার এই লংমার্চে বাধা দেবে- এটা তারা ‘কল্পনাও করতে পারেননি’।
“প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনি যখন আপনার পরিবারের বেদনাবিধুর ইতিহাস বর্ণনা করেন তখন আপনার চোখ দিয়ে পানি ঝরে। আজকে রোহিঙ্গাদের এভাবে কচুকাটা করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে- আপনার মনে একটুও ব্যথা নেই, আপনার এই আচরণকে আমরা ধিক্কার জানাই।”
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনা অভিযান। এরপর থেকে সহিংসতায় বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে, সহিংসতা থেকে বাঁচতে অন্তত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জাতিসংঘের তথ্য।
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর হত্যা, নির্যাতন বন্ধ করা, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া এবং রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনসহ কয়েকটি দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম এই লংমার্চের ঘোষণা দেন।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে গাড়িতে করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে পথসভা করারও ঘোষণা দেন তিনি।
সে অনুযায়ী দলটির নেতাকর্মীরা রোববার সকাল থেকে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে জড়ো হতে শুরু করলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্টন মোড়সহ আশপাশের কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বায়তুল মোকাররমে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, লংমার্চে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় আসার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তাদের কর্মীরা।
ইসলামী আন্দোলন চকবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, তারা তিনটি গাড়ি নিয়ে যাত্রা করার পথে চকবাজার থানাপুলিশ তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। বরগুনা থেকে আসা হান্নান মুন্সী বলেন, কাঁচপুর, শনিরআখড়া এলাকায় তাদের কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে সংগঠনটির কর্মীরা বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমের আশপাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এ সময় তাদের অনেকের মুখে সরকারবিরোধী স্লোগানও শোনা যায়।
পরে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত একটি খোলা ট্রাকে চড়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা। পুলিশ লংমার্চে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও করেছে বলে অভিযোগ করেন রেজাউল করীম।
‘লংমার্চে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে’ ২৩ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর সব জেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, “পরামর্শ করে বড় ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা দেব।”
বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ বাধা দেয়নি, অনুরোধ করেছে। জনভোগান্তির কারণে আমরা বার বার বলেছি, এখানে রাস্তা বন্ধ করে তারা যাতে সমাবেশ না করেন। আমাদের অনুরোধে তারা সমাবেশ শেষ করে চলে গেছেন । তাদের লংমার্চও স্থগিত করা হয়েছে।”