সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪ ১৭ই আষাঢ় ১৪৩১
Smoking
 
ভার্জিনিয়ায় শ্বেতাঙ্গদের সমাবেশে সংঘাতে নিহত ৩, জরুরি অবস্থা জারি
প্রকাশ: ০৯:৩৪ am ১৩-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৩৯ am ১৩-০৮-২০১৭
 
 
 


যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে উগ্র-ডানপন্থি সমাবেশের জন্য জড়ো হওয়া শেতাঙ্গদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন।

শনিবার ভর্জিনিয়ার চারলটসভিলে এ সহিংসতায় আরও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভার্জিনিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চারলটসভিলের ইমানসিপেশন পার্ক থেকে আমেরিকার গৃহযুদ্ধকালীন একজন জেনারেলের ভাস্কর্য অপসারণের বিরোধিতা করে শ্বেতাঙ্গদের এই উত্তেজনা।

১৮৬১ থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধে দাসপ্রথার পক্ষে ‘কনফেডারেট’ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়া জেনারেল রবার্ট ই লি এর ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সকালে সমবেত হন তারা। কনফেডারেট পতাকা নিয়ে নাৎসি আমলের নানা স্লোগান সহকারে পার্কের ওই ভাস্কর্য অভিমুখে যাত্রা করেন। এ সময় অনেকের মাথায় হেলমেট ও হাতে ঢাল দেখা যায়।

তাদের বিরোধিতা করে কয়েকশ মানুষ ওই এলাকায় সমবেত হন। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। হাতাহাতি, বোতল ও পাথরের টুকরো নিক্ষেপের পাশাপাশি পিপার স্প্রে ব্যবহারের ঘটনা ঘটে এ সময়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ।

এর কয়েক ঘণ্টা পর পার্কের কয়েক গজ দূরে শ্বেতাঙ্গদের বিরোধিতাকারীদের ভিড়ে একটি গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।  তাতেই ঘটে নিহতের ঘটনা।

সোস্যাল মিডিয়ায় আসা ভিডিও ও রয়টার্সের আলোকচিত্রে দেখা যায়, গাড়ির ধাক্কায় উড়ে গিয়ে পড়েন কয়েকজন।

সেখান থেকে আহত ২০ জনকে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া হেলথ সিস্টেমসে নেওয়া হয়। তাদেরই একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের একজন মুখপাত্র জানান।

সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে চারলটসভিলের মেয়র মাইক সিঙ্গার বলেছেন, “এখানে একজনের প্রাণ যাওয়ায় আমি মর্মাহত। শুভ বোধসম্পন্ন সবার প্রতি আমি ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

ভাইস মেয়র ওয়েস বেলামি সিএনএনকে বলেন, “ঈশ্বর আমাদের সহায়তা করুন-আমি সেই প্রার্থনা করছি।

“যা ঘটছে আমরা তেমনটি নই।”

চারলটসভিলের ঘটনার প্রতি নিবিড়ভাবে নজর রাখার কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বিদ্বেষ, গোঁড়ামি ও সহিংসতার এই কুখ্যাত প্রদর্শনের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প বা বারাক ওবামার সময় নয়-দীর্ঘ কাল ধরে এটা আমাদের দেশে ঘটছে। আমেরিকায় এর কোনো স্থান নেই।”

সব ধরনের বিদ্বেষকে সরিয়ে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমেরিকায় এই ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। আসুন সবাই মিলে এক হই।”

শ্বেতাঙ্গদের বিরোধিতাকারীদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়া শিকুয়ান রাহ (২১) বিবিসিকে বলেন, উগ্র-ডানপন্থি ওই গ্রুপগুলোর কোনো বক্তব্য নেই।

“তাদের বার্তা হল- ঘৃণা ও সহিংসতা। আমরা একটি স্পিরিচুয়াল যুদ্ধের মধ্যে আছি।”

শ্বেতাঙ্গদের এই বিক্ষোভের সমালোচনা আগেই করেন চারলটসভিলের মেয়র সিঙ্গার; একে ‘ঘৃণা, গোঁড়ামি, বর্ণবাদী ও অসহনশীলতার প্রদর্শন’ আখ্যায়িত করেন তিনি।

১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধ হয় ফেডারেল সরকার ও দক্ষিণাঞ্চলীয় ১১টি স্টেটের কনফেডারেট বাহিনীর মধ্যে। দাসপ্রথার পক্ষের কনফেডারেট বাহিনী ফেডারেল আর্মির কাছে পরাজিত হয়, ঘটে দাসপ্রথার বিলুপ্তি।

এরপরেও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক শহরে কনফেডারেট প্রতীকগুলো ধরে রাখা হয়, যা এখনও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কনফেডারেট পতাকা এবং ভাস্কর্যগুলো ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠে উগ্র ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো।  তাদের ভাষ্যমতে, এসব প্রতীক স্বাধীনতা ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির কথা বোঝায়।  আর বিরোধিতাকারীরা বলেন, এগুলোর মূলে রয়েছে দাসপ্রথা।

মুক্তমনাদের শহর হিসেবে পরিচিত চারলটসভিলে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ৮৬ শতাংশ ভোট পড়ে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উগ্র ডানপন্থিরা চাঙা হয়েছেন বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT