বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৯শে আষাঢ় ১৪৩১
Smoking
 
সিটিং হলো লোকাল, ভাড়া রইল সিটিং
প্রকাশ: ০৫:৪৬ pm ১৬-০৪-২০১৭ হালনাগাদ: ০৬:২৫ pm ১৬-০৪-২০১৭
 
 
 


পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি।

রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, বাংলা মোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগে সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলা বাস-মিনিবাসগুলো লোকাল হিসেবে চলাচল করছে। গাদাগাদি করে তোলা হয়েছে যাত্রী। তবে ভাড়া কম হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী ভাড়া আদায় না করে যাত্রীদের কাছ থেকে আগের মতোই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। অনেক বাসে ভাড়ার তালিকা নেই।


রাজধানীর আগারগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার মোড়, শাহবাগ ও রমনা এলাকায় বাসে থাকা এবং অপেক্ষমাণ যাত্রীদের অভিযোগ, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও বাসগুলো ভাড়া কমায়নি। বরং লোকাল বাসের মতো যেখানে সেখানে যাত্রী তুলছে। আর সর্বনিম্ন সাত টাকা ভাড়া থাকলেও বাসের কর্মচারীরা অনেক ক্ষেত্রেই এর চেয়ে বেশি নেয় বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

অবশ্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়াসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে আজ রোববার রাজধানীর আসাদগেট, আগারগাঁও (আইডিবি ভবনের সামনে), শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে, রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে ও যাত্রাবাড়ীর চাংপাই রেস্তোরাঁর সামনে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন। অভিযানের কারণে সড়কে বাস কম ছিল। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত গণপরিবহনে অভিযান চলবে।
অভিযানে কী কী অনিয়ম পাচ্ছেন জানতে চাইলে আগারগাঁওয়ে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিব রহমান বললেন, সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত মোট ৩০টি মামলা করেছেন। এর মধ্যে ২৩টি বাসের বিরুদ্ধে। বাসগুলোর বিরুদ্ধে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ যেমন করেছেন যাত্রীরা, তেমনি অনেক বাসে ভাড়ার তালিকা ছিল না। কয়েকটি বাসের ওপরে ক্যারিয়ার পাওয়া গেছে। আর বাম্পার না খোলায় সাতটা লেগুনাকে জরিমানা করা হয়। এসব ঘটনায় ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে কোনো বাসেরই গেট বন্ধ বা সিটিং পাওয়া যায়নি।

তবে মিরপুর থেকে শাহবাগের নিয়মিত যাতায়াতকারী জেসমিন আরা অভিযোগ করলেন, অন্য দিনের চেয়ে আজ বাসে তিনি সমস্যা বোধ করছেন। কারণ, সিটিং না থাকায় সমানে যাত্রী তুলছে বাসগুলো। তিনি বলেন, যাত্রী পূরণ হয়ে গেলে বাসগুলো যেন আর যাত্রী না তোলে সেটিও দেখা দরকার। কিন্তু সেদিকে কেউ নজর দিচ্ছে না। এ কারণে নারীদের দুর্ভোগ আরও বাড়ল।
মিন্টু নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, মিরপুর ১ থেকে শাহবাগের বাসভাড়া তালিকা অনুযায়ী ১৬ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু দিশারী পরিবহন এখনো ২৫ টাকা নিচ্ছে। এম আর আবির নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, মিরপুর-১ থেকে হেমায়েতপুরের ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু নিচ্ছে ৩৫ টাকা। তা-ও যাত্রীদের দাঁড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও অন্নান  রুট ঘুরে বিভিন্ন আভিযগ পাওয়া যায়- মিরপুর-১ থেকে ২ বা ১০ নম্বর খুচরাভাবে আগে পাঁচ টাকা দিয়ে নামতে পারতেন অনেকে এখন সেটি সাত টাকা। সিটিং বাসে যা পাঁচ, লোকালের মতো ঝক্কির বাসে তা বেড়ে সাত! এ কেমন নিয়ম, প্রশ্ন যাত্রীদের। উত্তরে কন্ডাক্টর, ‘সর্বনিম্ন বলে কথা! শুধু এই রুট নয় সব রুটেই সাতের কম দিয়ে নামতে পারবেন না।’

এক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ২৫ টাকায় আনসার ক্যাম্প থেকে কালশী ও ফ্লাইওভার রুটে নতুনবাজার (বারিধরা) যেতেন। এখন এই পথে ভাড়া ২৮ টাকা (৪ গুণ ৭)! তিনি বলেন,

‘আমি ২৫ টাকা দিতে গেলে কিছুতেই নিলেন না বাসের লোক। ২৮ এর কম হবেই না! এ কেমন নিয়ম। সিটিং থেকে লোকালে ভাড়া বেশি! এতে সবদিক থেকেই তো পোয়াবারো বাসওয়ালাদের। দাঁড়িয়ে বসে বেশি-বেশি যাত্রীও উঠলো, আবার ভাড়াও গেলো বেড়ে,’ বললেন সেই শিক্ষার্থী।

প্রথম দিনের অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ দুপুরে  বলেন, ‘আমরা পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে অভিযানে ছিলাম। আমি নিজে দুটি জায়গায় ছিলাম। এটা ঠিক, কিছু বাসে ভাড়ার তালিকা ছিল না। কিছু বাসের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম তো এক দিনে বন্ধ হবে না। তবে আমরা প্রতিদিনই অভিযানে থাকব। এভাবে চললে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

৪ এপ্রিল ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে সিটিং সার্ভিস প্রথা বাতিল করার ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া যানবাহন থেকে অবৈধ সাইড অ্যাঙ্গেল খুলে ফেলা এবং সিটিং সার্ভিস বন্ধসহ পরিবহন খাতের সমস্যা সমাধানে করণীয় ঠিক করতে পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও মালিক-শ্রমিক নেতারা শনিবার এলেনবাড়ীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয় রোববার থেকে।

সড়ক পরিবহন সমিতি ৪ এপ্রিল আরও যেসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১৫ এপ্রিলের পর যাত্রীদের কাছ থেকে কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। ভাড়ার তালিকা বাসের ভেতর দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে। ছাদের ওপরে ক্যারিয়ার, সাইড অ্যাঙ্গেল ও ভেতরের অতিরিক্ত আসন খুলে ফেলতে হবে। প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আসন সংরক্ষণ করতে হবে। এক মাসের মধ্যে রংচটা, রংবিহীন, জরাজীর্ণ বাস মেরামত করে রাস্তায় নামাতে হবে। তবে অনেকেই এখনো সেগুলো মানছেন না।
মোটরযান আইন অনুসারে, সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। চালকের আসনসহ মিনিবাসে ৩১টি আসন থাকবে। আর বিআরটিএ পরিবহন খাতের ২০টি বিষয়ে ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করে বাস-মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। সর্বশেষ ব্যয় বিশ্লেষণে, প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ৮০ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়ে চলাচল করবে। কিন্তু রাজধানীতে প্রায় সারা দিনই দাঁড়িয়ে যাত্রী যাতায়াত করে। যাত্রীরা সকাল ও বিকেলে অফিসযাত্রা ও ছুটির সময় দরজাতেও ঝুলে যাতায়াত করেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) নাজমুল আহসান মজুমদার বলেন, ‘বাস মালিক সমিতির নেতারা আমাদের কথা দিয়েছেন, এখন থেকে বাড়তি ভাড়া তাঁরা নেবেন না। সব বাসে ভাড়ার তালিকা থাকবে। আমরা অভিযানে এ বিষয়গুলো দেখছি। এ ছাড়া বাম্পার, ক্যারিয়ার আছে কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, নিয়মিত অভিযান চললে শৃঙ্খলা ফিরবে।’

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT