কুষ্টিয়ায় জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা
জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব তাই এই সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : জননীর কাছে সবার আছে জন্ম-ঋণ, জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতায় অংশ নিন’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ‘সার্ভিক্যাল ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ডে’ বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির কুষ্টিয়া জেলা শাখা। দিবসটি উপলক্ষে রোববার বিকেলে ডা: লিজা ডা: রতন ম্যাটসের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী বিশ্ব্বিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাম্মি আক্তার। বাংলাদেশ মহিলা সমিতির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি বেগম নুরজাহানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া পৌরসভার ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শাহানা সুলতানা বণি, কুষ্টিয়া জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শাহানারা বেগম। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ডা: রতন ডা: লিজা ম্যাটস'র চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ডা: আসমা জাহান লিজা। বক্তারা বলেন, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার যেহেতু প্রতিরোধ করা সম্ভব তাই প্রয়োজন বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং জরায়ু-মুখ নিয়মিত পরীক্ষা করা। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আগে অনেকদিন ধরে একটি ক্যান্সার পূর্ব অবস্থা থাকে। এই প্রাথমিক অবস্থাকে সনাক্ত করে সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই জরায়ু-মুখ ক্যান্সার মুক্ত রাখতে চাইলে বিবাহিত/যৌনসম্পর্ক রক্ষাকারী মহিলা যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি তাদেরকে অবশ্যই প্রতি তিন বছর পর পর প্রশিক্ষিত ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে জরায়ু-মুখ পরীক্ষা (ভায়া) করতে হবে কারণ এই বয়সের পরে এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে যাদের আঠার বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে তাদের জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকায় এসব মহিলাদের বয়স পঁচিশ বছর হলেই জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করানো শুরু করতে হবে। আমাদের মতো দরিদ্র একটি দেশে ক্যান্সারের মতো একটি রোগের চিকিৎসা সুবিধা অপর্যাপ্ত এবং ব্যয়বহুল। তাছাড়া ক্যান্সার হয়ে গেলে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা প্রায় অসম্ভব। তবে জরায়ু-মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য হওয়ায় এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং নিয়মিত ভায়ার মাধ্যমে জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগীতা করেন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে লিফলেট বিতরণ করেন সাফের নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড. শর্মিষ্ঠা হোসেন। সভাপতির বক্তব্যে বেগম নুরজাহানের লজ্জা নারীর ভুষন আবার লজ্জা নারী মরণ। আমরা নারীরা অনেক সময় অসুখ বিসুখ হলে লজ্জায় বলতে চাই না। এগুলো না করে আমরা ’মা-বোনেরা সকলেই সচেতন হবো এবং আমাদের পরিবারকে এ বিষয়ে জানাবো।’ মীর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার স্ত্রী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমি আমার স্ত্রীকে ১৩বার ভারতে চিকিৎসা করিয়েছি। তবুও তাকে বাঁচাতে পারিনি। তাই তখন থেকেই আমি এই স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতায় কাজ করছি। তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত মা বোনদের সচেতন করছি। আমাদের কোন মা-বোনই যেন অসচেতনতার কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয় সে জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এসময় শতাধীক নারী ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এস এম জামাল, কুষ্টিয়া থেকে।
হালনাগাদ: ১১:১৫ am ১৫-০১-২০১৮