একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘না’ ভোট রাখা ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন সুশীল সমাজের বেশির ভাগ প্রতিনিধি।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের থেকে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। সংলাপের একপর্যায়ে সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনী দায়িত্বপালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে বেশির ভাগ প্রতিনিধি ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তিনি আরও বলেন, ইসিকে জনমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। ইসি দৃঢ় এবং স্বাধীন ভূমিকায় আছে—এটা দৃশ্যমান হতে হবে। এটি সবচেয়ে বড় কাজ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, কিছু বিষয়ে আইনের দুর্বলতা আছে। সেগুলো সংস্কার করে ঘাটতিগুলো পূরণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ধর্মের বিষয় একেবারেই রাখা যাবে না। এ ব্যাপারেও সুশীল সমাজের বেশির ভাগ প্রতিনিধি ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার ব্যয় সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এ জন্য ইসিকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, সেনাবাহিনীকে যদি ফিলিং স্টেশন, রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কেন নির্বাচনে দায়িত্বপালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে সবাই নির্বাচনে আসতে পারে। প্রার্থী, পোলিং এজেন্টদের ভয় দূর করতে হবে।
‘না’ ভোট প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, না ভোট যেন রাখা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে না ভোট আছে। তিনি আরও বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের কোনো সুযোগ যেন না থাকে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নির্বাচনে ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সেনা মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এ বিষয়ে সুশীল সমাজের বেশির ভাগ প্রতিনিধি ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সহায়ক সরকার দরকার। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হওয়া দরকার।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, যেসব আইনে দুর্বলতা আছে সেগুলো আইন সংস্কার করা দরকার। ইসির উচিত সরকারকে বলা তাঁরা কী করতে চায়। এ ছাড়া তাঁরা বলে যে তফশিল ঘোষণার আগে কিছু করার নেই। এই কথাটি ঠিক না। এ বিষয় নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য তাঁদের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। যারা অভিবাসী তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ইসির কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দরকার। প্রশিক্ষণ থাকলে ৭৫ শতাংশ অনিয়ম দূর করা সম্ভব। কমিশনের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিবন্ধী ও বেদে সম্প্রদায়ের চাহিদা ও বিশেষ প্রয়োজন মিটিয়ে নির্বাচনে তাঁদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনীম আরিফা সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজই জনগণের মতকে তুলে ধরা। সেটা করতে গিয়ে বাধা আসবেই। ইসি যদি জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করে তাহলে জনগণ তাঁদের পছন্দ করবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কথা বলেন তিনি।
ইসির সূত্র বলেছে, ৫৯ জনকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সংলাপে ৩০ জনের মতো প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। সংলাপে নির্বাচনী আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটকেন্দ্র প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
সংলাপে আরও অংশ নেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অজয় রায়, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান প্রমুখ।