শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
আজ পহেলা বৈশাখ।আজ নববর্ষ। স্বাগত ১৪২৪ সাল
প্রকাশ: ১২:৩০ am ১৪-০৪-২০১৭ হালনাগাদ: ১২:০৫ am ১৪-০৪-২০১৭
 
 
 


সংস্কৃতি ডেস্কঃ ওই নতুনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখির ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর…। আজ পহেলা বৈশাখ।আজ নববর্ষ। স্বাগত ১৪২৪ সাল।

আজ ভোরে পূর্ব দিগন্তের সূর্যোদয়ের প্রথম আলো বিচ্ছুরিত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সূচিত হবে বাংলা নববর্ষের শুরু। তখন থেকেই বৈশাখের সর্বজনীন উৎসব-আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠতে দেখা যাবে সারাদেশ, সব বয়সের মানুষকে। শহরের রাস্তা ও উদ্যানে নামবে মানুষের ঢল। শুধু তা-ই নয়, শহর-নগর, গ্রাম-গ্রামান্তর সর্বত্রই বইবে বর্ষবরণের প্রাণোচ্ছল উৎসব-তরঙ্গ। পীড়াদায়ক তাপদাহ তুচ্ছ করে, অস্বস্তি উপেক্ষা করে ভোর থেকে দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যা-গভীর রাত পর্যন্ত আজ চলবে বৈশাখবরণ। দেখা যাবে কোথাও গান বাজছে, কোথাও মেলা বসেছে। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঢাকের শব্দ, ঢোল, বাঁশি, নাগরদোলার শব্দ, পায়ে পায়ে উত্থিত ধূলিপুঞ্জের মধ্যে মানুষের গুঞ্জরণ-ধ্বনি, নাগরদোলায় ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে ভয়জাগানো কিছু শব্দ, শিশুর কলরব উচ্ছ্বাস। বৈশাখী মেলায় রকমারি সম্ভার হাতের চুড়ি, কানের দুল, সুগন্ধি সাবান, হাওয়াই মিঠাই, চুলের ফিতা, নেইলপলিশ, রঙিন বেলুন, কাঠের পুতুল, মাটির পুতুল, আম কাটার চাকু, জিলাপি, খৈ-বাতাসা, ঘরগেরস্থির দরকারি বস্ত  আরও কত কি ।

নববর্ষ উপলক্ষে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ঢাকাবাসীর কাছে নববর্ষ উৎসবের একটি প্রধান আকর্ষণ। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারা ও চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান ,ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, শহীদ মিনার, জাতীয় প্রেসকাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা কাব, গুলশান কাব, উত্তরা কাব, লেডিস কাব, অফিসার্স কাব ও পুরান ঢাকাসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে নববর্ষের নানা ব্যঞ্জনা ও উৎসব। শুধু তাই নয়, এই সর্বজনীন বৈশাখী অনুষ্ঠানের নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘বৈশাখী ফ্যাশন’। বৈশাখকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ফ্যাশন হাউজগুলো ২-৩ মাস আগ থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রঙ-বেরঙের নানা ডিজাইনের শাড়ি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ ও শিশু পোশাকের বেচা-বিক্রিও অকল্পনীয়। জমজমাট প্রতিটি ফ্যাশন হাউজ। সব শ্রেণী-পেশার সব বয়সী মানুষের মনের গভীরে দারুণভাবে রেখাপাত করে এই পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তিও বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান।

 

চৈত্রসংক্রান্তির ইতিহাস প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। কিন্ত বাংলা সন বা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস তত প্রাচীন নয়। মোগল সম্রাট মহামতি আকবরই ফসল কাটার মৌসুমে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। আর এ দুরূহ কাজটি সম্পাদনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন সময়ের সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুপন্ডিত, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী, সম্রাটের অন্যতম আমাত্য আমির ফতেহ্উল্লাহ সিরাজীকে। তিনিই তৎকালীন বাংলার কৃষক সমাজের কৃষি উৎপাদনের মৌসুম তথা ফসল ঘরে তোলার সময়টাকে গুরুত্ব দিয়ে হিজরি সন ও শকাব্দের সঙ্গে সৌরসন তথা খ্রিস্টাব্দের সমন্বয় করে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন। সে হিসেবে ইংরেজি ১৫৫৬ সালের ১১ এপ্রিল ছিল বাংলা সনের শুভযাত্রা। ওই সময় এ বাংলা সনকে বলা হতো ফসলি সন। এতে মোগল সম্রাটদের খাজনা আদায়ের সুবিধার পাশাপাশি বাঙালিরা পেয়ে যায় নিজস্ব বর্ষপঞ্জি। পরবর্তী সময়ে চান্দ্র মাস অনুযায়ী হিজরি সন ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজি সনসহ নানা হিসাব-নিকাশ করে ১৪ এপ্রিল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ধারা সূচিত হয়। তখন হাতে লেখা পঞ্জিকার প্রচলন থাকলেও প্রথম বাংলা মুদ্রিত পঞ্জিকা প্রকাশিত হয় ১৮১৮ সালে। ১৩৫ পৃষ্ঠার এ পঞ্জিকার প্রকাশক ছিলেন কলকাতার শ্রী রামহরি। জানা যায়, ইউরোপে প্রথম ১৪৫৭ সালে এবং ইংল্যান্ডে ১৪৯৭ সালে পঞ্জিকা মুদ্রিত হয়। ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখলের পর তাদের মুদ্রিত এবং ভারতে হাতে লেখা পঞ্জিকার সমন্বয় করে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার সভাসদ ও পণ্ডিতদের ডেকে বাংলা পঞ্জিকার সংস্কার করেন। পরবর্তীকালে হিজরি সনের আদলে মুসলমানরাও ১৮৯৯ সালে মো. রেয়াজউদ্দিনের সম্পাদনায় ২৭২ পৃষ্ঠার একটি মুসলমানি পঞ্জিকা প্রকাশ করেন। সে সময়কার বাংলা পঞ্জিকার প্রথম সংস্কার করেছিলেন বহুভাষার সুপণ্ডিত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬০ সালে। পরবর্তীকালে ১৯৯৪-৯৫ সালে বাংলা একাডেমী আরও সংকলিত ও সংস্কার করে, যা এখন বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাবহ্রত।

সাম্প্রতিক সময়ে বৈশাখের ভিন্ন আমেজের ছোঁয়া লেগেছে ব্যবসায়িক ও সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। ক্রেতা আকর্ষণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বৈশাখী অফার ঘোষণা করেছে। অডিও-ভিডিও কোম্পানীগুলোও বৈশাখ উপলক্ষে নতুন নতুন অ্যালবাম বাজারে ছেড়েছে। ফ্যাশন হাউজগুলোর বিশেষ আয়োজন এবার আরো বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। নববর্ষের শুভেচ্ছা আদান-প্রদানে কাগুজে কার্ডের চেয়ে ই-মেইল, মোবাইল ফোন এখন অধিকতর কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন আর কেই হাতের লেখায় জানাতে চায় না যে শুভ নববর্ষ। এখন মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ছোটখাটো এক ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে জানানা দেয় শুভ নববর্ষ। আর এই ইন্টারনেটের যুগে এসে অনেকেই ইমেইল করে জানাতে চাই শুভ নববর্ষ এসেছে। আর ইন্টারনেটের বদৌলতে সবাই এখন ফেসবুকের মাধ্যমে জানাচ্ছে নববষের্রর বর্নিল আমেজে নীল শুভেচ্ছা। সাথে আপলোড করছে মন মাতোনো দারুন দারুন সব ছবি ও অনুভুতির কাল্পনিক ছবিগুলো প্রকাশ করছে। বৈশাখকে বরন করতে সারাদেশ যখন আনন্দে ভাসবে। সবাই একসাথে আনন্দ আর হৈ হুল্লুড় করবে যেন সেই প্রত্যাশায় বলি…মুছে যাক গেল বছরের যত গ্লানি; যত শূন্যতা, মুছে যাক গেল বছরের যত ব্যথা; যত মর্মকথা, আগামী সাজাও নতুন সাজে; তুমি হও আগামীর আশা, এসো নতুন ভাবে শুরু করি… নতুনে শিখি ভালোবাসা ।

 

সবাইকে আম্বালা নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে শুভ নববর্ষ জানাই।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT