রানা প্লাজা ট্রাজেডির পাঁচ বছর পূর্ণ হল আজ। সেদিন শোক ও বেদনায় ভারী হয়ে উঠেছিল সাভারের আকাশ। যে ঘটনা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দেয়।
দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এই শিল্প বিপর্যয়ে নিভে যায় ১১৩৬টি প্রাণপ্রদীপ। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে আরো ২৪০০ পোশাক শ্রমিক।
রানা প্লাজার বিশাল তে ধসে পড়ার আগের দিনই ধরা পড়েছিল বিশাল এক ফাটল। পরের দিন কাজে যোগ দিতে গিয়েও থেমে যায় শ্রমিকরা। জোর করেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় মৃত্যুকূপে। এরপরই ঘটে স্মরণকালের এই ভয়াবহ বিপর্যয়।
সে ছিল এক বিভীষিকার গল্প। নয়তলা ভবনটি ধসে মুহুর্তেই দুই তলার সমান হয়ে যায়। ইট-কংক্রিটে চাপা পড়ে হাজারো তাজা প্রাণ। বাঁচার জন্য আকুতি ছড়িয়ে পড়ে দেয়ালের কোণে কোণে। কারো মৃত্যু হয়েছে নিমেষেই, কেউ মারা গেছেন অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে।
ধসে পড়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান নিবেদিত মানুষ। প্রাণপণ চেষ্টা শুরু হয় জীবন বাঁচানোর। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও নামেন উদ্ধার তৎপরতায়। টানা বিশ দিন চলে উদ্ধার অভিযান। প্রাণে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়ে এলে শুরু হয় যান্ত্রিক উদ্ধার অভিযান।
ঘটনার ৫ বছর পরেও সেই বিভীষিকার কথা মনে পড়লেই আজো আঁতকে ওঠেন আহত শ্রমিকরা। এদেরই একজন ফরিদপুরের আসমা বর্তমানে এ্যামট্রানেট গার্মেন্টেসের সুইং সেকশনের কর্মী। অন্ধকার ধ্বংসস্তুপেই টানা চার দিন আটকে থেকেছেন হতভাগ্য এই পোশাক শ্রমিক। দূর্বিষহ সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করে আসমাকে।
আসমা বলেন, ‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রানা প্লাজার সেই স্মৃতি আমি ভুলতে পারব না। টানা এক বছর আট মাস আমি কোন কাজ করার সাহস পাইনি। বারবার কাজে ফিরতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের কষ্ট দেখে আবার পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছি।’ বললেন, সকালে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য কারখানার সিড়িতে পা ফেলতেই সেদিনের কথা তার মনে ভেসে ওঠে প্রতিদিন।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় শ্রমিকদের প্রাণহানির পাশাপাশি বাংলাদেশের পোষাক শিল্পেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিকদের দূর্বিষহ জীবনের কাহিনী। ফল হিসেবে অনেক বিদেশি ক্রেতাই অসন্তষ্ট হন পোষাক মালিকদের উপর। তবে পাঁচ বছর যেতে না যেতেই রানা প্লাজার সেই স্মৃতি ভুলতে বসেছে সরকার ও পোশাক মালিকরা। কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের অসন্তোষ রয়ে গেছে এখনও।
এদিকে ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার পরেও শ্রমিকদের জোর করে কারখানায় ঢুকতে বাধ্য করা ভবন মালিক সোহেল রানার বিচার কাজও থেমে রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই মামলার চার্জশিট প্রদান করা ছাড়া আর কোন অগ্রগতি নেই।