বাংলাদেশে উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামের’ সব ধরনের কর্মকাণ্ড সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে; সাম্প্রতিক কয়েকটি গুপ্তহত্যার ঘটনায় দায়ী করা হচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনটিকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তার বিভাগ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়।
সেখানে বলা হয়, “আনসার আল ইসলাম নামের জঙ্গি দল/সংগঠন ঘোষিত কার্যক্রম দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থি।... সংগঠনটির কার্যক্রম জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় বাংলাদেশে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।”
এ নিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ও উগ্র ইসলামি সংগঠন হিসাবে সাতটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হল।
অন্য ছয়টি সংগঠন হল- জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।
এর মধ্যে জেএমবিসহ চারটি সংগঠন নিষিদ্ধ হয় ২০০৫ সালে। বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যার দায়ে জেএমবির শীর্ষনেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
উগ্রপন্থা প্রচারের জন্য ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ করা হয় হিযবুত তাহরীরকে।
পুলিশ ও র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যে নেতৃত্বশূন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতার খবর আসে।
সংগঠনটির আমির মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী ওই মামলার রায়ে দোষি সাব্যস্ত হয়ে কারাভোগ করছেন। তার দুই অনুসারীর মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন এবং আরও চারজনের বিভিন্ন মেয়াদের সাজার রায় এসেছে।
২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর সদস্যরাই আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা চালিয়ে আসছে বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
তাদের ধারণা, ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়াউল হক রয়েছেন এ সংগঠনের সঙ্গে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা নেটওয়ার্কের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ আনসার আল ইসলাম নিজেদেরকে ওই সংগঠনের বাংলাদেশ শাখা হিসেবে দাবি করে।
লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা ও হত্যার ঘটনায় এ সংগঠন জড়িত বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গতবছর অগাস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার কথা জানান।
সেদিন তিনি বলেন, “এক সময় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ ছিল। তারা অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালাত। এই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমই পরে আনসার আল ইসলাম নামে আত্মপ্রকাশ করে, যারা বাংলা টিমের ব্যানারে কাজ করতেন, তারা আনসার আল ইসলামে কাজ করা শুরু করেন।”
সংগঠনটির কাজের ধারার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “এই সংগঠনের শীর্ষ পদের নাম সমন্বয়ক। এর তিনটি বিভাগ রয়েছে। তাদের প্রথমটি হল দাওয়া বিভাগ। এই বিভাগে লজিস্টিক ও রিক্রুটমেন্ট দেখা হয়। দ্বিতীয়টি হল আসকারি বিভাগ। সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তৃতীয়টি হল গণমাধ্যম শাখা। এটি আইটি এক্সপার্টরা পরিচালনা করে থাকেন। সমন্বয়কের কাজ এই তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করা।”
এছাড়া ‘অপারেশনের’ জন্য আরও দুটো বিভাগ রয়েছে বলে জানিয়ে মনিরুল বলেন, “এগুলো হল মাশুল এবং মামুর। কোনো অপারেশন পরিকল্পনা ও পরিচালনার কাজটি দেখে মাশুল বিভাগ। আর অপারেশনে যারা অংশগ্রহণ করে সেই সদস্যরা মামুর বিভাগের অধীনে থাকে।”