চলন্ত ট্রাকে ধর্ষণের শিকার মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ট্রাকেই ফেলে রেখে পালিয়ে যায় চালক ও হেলপার। গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে আসার পথে চলন্ত ট্রাকে রাতে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনার পর সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এসিআই এলাকায় বুধবার (২ আগস্ট) সকালে ট্রাক থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনায় পুলিশ চালক মেহেদী হাসান রানাকে গ্রেফতার করেছে। তবে হেলপার সোহান এখনও পলাতক। পুলিশ, ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা ও স্থানীয় লোকজন এসব তথ্য জানান। স্থানীয়রা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া মনিপুর এলাকার বাড়ি থেকে ওই কিশোরী চৌরাস্তা এলাকায় চলে যায়। সে রাস্তা হারিয়ে ফেললে চৌরাস্তায় চালক মেহেদী হাসান রানা ও হেলপার সোহান তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মালবাহী ট্রাকের ভেতরে তুলে নেয়। পথে এয়ারপোর্ট এলাকায়সহ কয়েকটি স্থানে চালক মেহেদী হাছান ও হেলপার সোহান তাকে তিন দফায় ছয় বার ধর্ষণ করে। কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, বুধবার (২ আগস্ট) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের এসিআই এলাকায় ট্রাকের ভেতরে কান্নার শব্দ শুনে লোকজন এগিয়ে যায়। তবে এর আগেই চালক ও হেলপার ট্রাক কিশোরীকে ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ এ খবর পেয়ে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং ট্রাক সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়।
সিদ্ধিরগঞ্জের এসিআই এলাকার বাসিন্দা সামাদ মিয়া বলেন, ‘সকাল সাড়ে ছয়টা এসিআইয়ের সামনে একটি ট্রাকের ভেতর থেকে এক কিশোরী মাথা বের করে গোঙাচ্ছে। এ সময় আমি এগিয়ে গিয়ে মেয়েটি জিজ্ঞাসা করি কী হয়েছে? তার বাড়ি গাজীপুরে। ট্রাকের হেলপার ও চালক রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে তিন দফায় ছয়বার ধর্ষণ করেছে। তখন মেয়েটি জানায়, তাকে দুই ঘন্টা আগে ট্রাকের চালক ও হেলপার এখানে ফেলে রেখে চলে গেছে। পরে সকাল এগারোটার দিকে পুলিশ এসে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
একই এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘ট্রাকে মেয়েটিকে অসুস্থ দেখা গেছে। আমাদের কাছে সে বলেছে, ট্রাকের চালক ও হেলপার একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেছে।’
ষাটোর্ধ্ব সালাউদ্দিন বলেন, ‘রাস্তায় নারীরা যাতে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য এসব অপরাধীদের কঠোর শাস্তি চাই। আর কেউ যেন এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়।’
ঘটনাস্থলে ছুটে আসা ওই কিশোরীর বাবা সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার রাতে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় তার মেয়ে। পরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছুটে আসেন। তার মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী বলে জানিয়েছেন কিশোরীর বাবা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ঘটনায় থানায় মামলা করবো।’ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
সিদ্ধিরগঞ্জের এলাকার লোকজনও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সিদ্ধরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে চালক মেহেদী হাসান রানা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।’
ওসি জানান, ধর্ষণের এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকা থেকে ট্রাকচালক মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করেছে। কাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান ওসি। হেলপার সোহানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও উল্লেখ করেন।