এর আগে ২৯ মার্চ (বুধবার) সুন্দরবনের শরণখোলা এবং চাঁদপাই রেঞ্জে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিশেষ অভিযানে ‘ছোট রাজু’ বাহিনীর প্রধান রাজুসহ ১৫ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।
র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবির বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আত্মসমর্পণকারীরা হলেন- খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা ও ‘ছোট রাজু’ বাহিনী প্রধান মো. রাজু মোল্লা ওরফে ছোট রাজু (৪৮), মো. মনিরুল ইসলাম (৩৫), মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী (২৯), মো. আলফাজ হোসেন (২৫), মো. হারুন সরদার (৩৮), মো. বিল্লাল গাজী ওরফে ম্যাজিক বিল্লাল (৩৬), মো. খতিব গাজী ওরফে খতিব (৩৭), মো. মিকাইল গাজী (৩৭), মো. কামরুল সরদার (৩৯), মো. ফরহাদ সরদার (২৬), মো. সালাম গাজী (৩৭), মো. মিলন শেখ (২৫), মো. ফরহাদ গাজী (৩২), মো. সাব্বির শেখ (৪২) ও মো. মনিরুল গাজী মনি (৩৯)।
এদের কাছ থেকে ২১টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রের প্রায় এক হাজার ২৩৭ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। যার মধ্যে ৫টি বিদেশি একনালা বন্দুক, ৫টি বিদেশি দোনালা বন্দুক, ৫টি পয়েন্ট ২২ বোর বিদেশি এয়ার রাইফেল, ২টি বিদেশি পয়েন্ট ২২ রাইফেল, ৪টি বিদেশি ওয়ান শ্যুটার রয়েছে।
মেজর আদনান কবির জানান, ছোট রাজু বাহিনী সুন্দরবনের মংলা, হাড়বাড়িয়া, ভদ্রা এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সর্বাপেক্ষা সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী। পশুর নদী সংলগ্ন বিভিন্ন খাল ও চাঁদপাই রেঞ্জের ভদ্রা, মরাপশুর ও জুমরা সংলগ্ন অঞ্চলের বনজীবী ও জলজীবী সাধারণ মানুষ তাদের টার্গেট ছিলো। ২০১২ সাল থেকে তারা সুন্দরবনে বিপুল বিক্রমে জলদস্যু বৃত্তি করে আসছিলো। কিন্তু সম্প্রতি র্যাব-৮ এর ক্রমাগত কঠোর অভিযানে ছোট রাজু বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
এর আগে র্যাবের কঠোর তৎপরতার কারণে ২০১৬ সালের ৩১ মে সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু ‘মাস্টার বাহিনীর’ ১০ জন জলদস্যু ৫২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩ হাজার ৯শ’ ৪ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং একই বছরের ১৪ জুলাই কুখ্যাত জলদস্যু ‘মজনু ও ইলিয়াস বাহিনীর’ ১১ জন জলদস্যু ২৫টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং এক হাজার ২০ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদসহ র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ‘আলম ও শান্ত বাহিনী’র ১৪ জন ২০টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ৮ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদসহ এবং ১৯ অক্টোবর ‘সাগর বাহিনীর’ ১৩ জন সদস্য ২০টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫শ’ ৯৬ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে।
এরপর ২৭ নভেম্বর ‘খোকাবাবু বাহিনীর’ ১২ জন সদস্য ২২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার তিন রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদসহ এবং ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি ২৫টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রের প্রায় এক হাজার ১শ’ ৫ রাউন্ড গোলাবারুদসহ ‘নোয়া বাহিনীর’ ১২ সদস্য র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
চলতি বছরর ২৯ জানুয়ারি ৩১টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রের প্রায় এক হাজার ৫শ’ ৭ রাউন্ড গোলাবারুদসহ জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২০ সদস্য র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
১০ মাসে মোট ৯টি বাহিনীর ৯২ জন জলদস্যু, ১৯৫টি অস্ত্র ও ১০ হাজার ১৪৩ রাউন্ড গোলাবারুদসহ র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
জলদস্যু আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র্যার ৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আনোয়ার উজ জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।