মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ ৫ জন নিহতের মামলায় বাস চালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা ও জেলা জজ আব্দুল্লাহ আল-মামুন ফয়জুল কবীর এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ তাঁর নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’-এর শুটিং লোকেশন নির্বাচনের জন্য আসেন।
এ সময় তার সফর সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সিইও মিশুক মুনীর, অধ্যাপক ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলিসহ নয়জন।
লোকেশন দেখে ঢাকা ফেরার পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-০৩০২) সঙ্গে বিপরীতমুখী চুয়াডাঙ্গাগামী বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪২৮৮) সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ, মিশুক মুনিরসহ মাইক্রোবাস চালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন নিহত হন।
এসময় গুরুতর আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, অধ্যাপক ঢালী আল-মামুন ও তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিক।
এ ঘটনায় ঘিওর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান মামলা করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে বাস চালক জামির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর সিআরমিস ৫২৫/১১ জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান ওই চালক।
এরপর তদন্ত শেষে ঘিওর থানার তৎকালীন ওসি আশরাফ-উল ইসলাম ২০১২ সালের ২১ মার্চ চালককে অভিযুক্ত করে ২৭৯/৩৩৭/৩৩৮(ক)/৩০৪ ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়।
২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ধার্য করা সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনে জেলা ও দায়রা জজ একেএম মোস্তফা দেওয়ানের আদালতে অভিযোগকারী ঘিওর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য দিনে মানিকগঞ্জ সাব-জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ রফিকুল ইসলামের আদালতে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিনা মাসুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এরপর কয়েকটি কার্যদিবসে আরো কয়েকজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে বিচারিক আদালত।
দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।