দেশের তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গতকাল ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের সময় ক্লাসরুমেই ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটুকে (২৩) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ২২ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আসন বরাদ্দকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। চালানো হয়েছে ব্যাপক ভাঙচুর। দলীয় টেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে সংঘর্ষে এক পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : সিলেট : জেলার বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ক্লাসরুমেই একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দুপুরে ছাত্রলীগের ‘পল্লব গ্রুপ’ ও ‘পাভেল গ্রুপ’-এর মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। নিহত ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু বিয়ানীবাজারের কসবা নয়াটিলা এলাকার খলিল উদ্দিনের ছেলে। এলাকায় একটি মোবাইলের দোকান চালাত সে। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হল-বিয়ানীবাজার উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের মো. হোসেন আহমদের ছেলে ফাহাদ (২২), একই উপজেলার কসবা এলাকার মাসুক আহমদের ছেলে কামরান (২৪) ও খাসাগ্রামের শাহাবউদ্দিনের ছেলে এমদাদুর রহমান (২২)। কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্রনাথ সকালের খবরকে জানান, দুপুর ১টার দিকে অনার্স প্রথম বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল। এ কারণে দুপুর ১২টার পর কলেজ ছুটি হয়ে যায়। পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছিল তখন হঠাত্ একটি কক্ষে বিকট শব্দ শোনা যায়। এরপর সেখান থেকে লিটুর লাশ পাওয়া যায়। দুপুরে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে এসব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় কলেজের সব অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা স্থগিত থাকবে, তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নিহত লিটু জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পাভেল মাহমুদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষের আগে লিটুসহ পাভেলের দলের কয়েকজন কলেজের একটি কক্ষে বসে ছিল। এ সময় কয়েক যুবক এসে তাদের দিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। লিটুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা জানান। বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিত্সক মাসুম আহমদ জানান, মাথায় গুলি লাগায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই লিটুর মৃত্যু হয়েছে। পাবনা : বঙ্গবন্ধু হলে আসন বরাদ্দ এবং ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের অন্যতম সদস্য, পাবনা সদর আসনের সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্স দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সাদেকী শান্ত ও সেক্রেটারি ওয়ালীউল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে সহ-সভাপতি আরাফাত হোসেন-মতিন গ্রুপের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরই জের ধরে ভোরে আরাফাত গ্রুপের লোকজন শান্ত গ্রুপের এক কর্মীকে মারধর করে। এ নিয়ে সকালে দু’গ্রুপের মধ্যে ক্যাম্পাস চত্বরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের দুটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ঘটনার সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পাবনা-ঢাকা মড়াসড়কে এসে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয় জানান, ছাত্রলীগ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসন তত্পর রয়েছে। রাজশাহী : দলীয় টেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের কথাকাটাকাটির জেরে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে এক পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক বাইতুল হোসেন তরুর সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, দলীয় টেন্টে বসা নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই সমর্থকের মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।