হাওর এলাকায় উজানের পানিতে বাঁধ ভেঙে হাওর প্লাবিত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান প্রচার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে হাওরের মানুষের জন্য ত্রাণ তত্পরতা জোরদার করতে এবং সরকারের নেওয়া ত্রাণ কার্যক্রম গণমাধ্যমে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নির্দেশ দেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী জানান, বৈঠকের একপর্যায়ে হাওরের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাওরের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রী এবং সচিবদের দেওয়া পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বলছেন হাওরে বন্যায় এত মাছ মরেছে, এত ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এই পরিমাণ কে মেপেছে? কিসের ভিত্তিতে এ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হল? উল্লেখ্য, গত রোববার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান বলেন, হাওরে বন্যায় মোট ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ নষ্ট হয়েছে এবং ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, বন্যায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যেখান থেকে ছয় লাখ টন চাল পাওয়া যেত। তবে এতে আমাদের খাদ্যঘাটতি হবে না। পানি সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, হাওর এলাকায় বিদ্যমান বাঁধগুলো ষাটের দশকের পরিকল্পনায় করা। এবারের বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। এবারের ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নেব বাঁধগুলো কী পরিমাণ উঁচু করা যায়। ভারত থেকে বেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনার হাওর তলিয়ে ব্যাপক ফসলহানি ও মাছসহ জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ত্রাণ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক যে মন্ত্রণালয় আছে তারা যেন তৎপর হয় সে ব্যাপারে অনুশাসন দেওয়া হয়েছে। কী ধরনের তৎপরতার কথা বলা হয়েছে-প্রশ্নে তিনি বলেন, ওখানে যা প্রয়োজন পুনর্বাসনের জন্য, এতে যেন জনগণ সন্তুষ্ট হয় যে আমাদের জন্য কিছু করা হচ্ছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রমের পরিকল্পনা করে ফেলেছে এবং কাজও শুরু করে ফেলেছে। তারপরও যেটা করেছে সেটা যেন দৃশ্যমান হয়। বাঁধ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনা হয়নি। অন্য ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, মানুষ ত্রাণ ঠিকমতো পাচ্ছে কি না। মন্ত্রিসভার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, ত্রাণ পর্যাপ্ত মানুষের কাছে পৌঁছেছে, ত্রাণ মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছে। লোকজন বুঝতে পারছে যে কিছু কাজ হয়েছে। আলোচনা হয়েছে যে এটা আরেকটু প্রচারে নিয়ে আসা। কী কী কাজ হয়েছে মানুষ জানতে পারল, কিন্তু মিডিয়াতে এলো না। প্রধানমন্ত্রীর মেসেজ, প্রচারে যেন আসে। মৎস্য সঙ্গ নিরোধ আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন : গতকাল মন্ত্রিসভায় ‘মৎস্য সঙ্গ নিরোধ আইন-২০১৭’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী মৎস্য, মৎস্যপণ্য বা মেস্যর উপকারী বা ক্ষতিকারক জীবাণু আমদানির জন্য সরকারের অনুমোদন লাগবে। কেউ যদি আইন অমান্য করে এই কাজ করেন, তাহলে অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি নতুন আইন। বিভিন্ন দেশ থেকে মৎস্য বা মৎস্যজাত পণ্য যেমন পোনা, রেণু ইত্যাদি আমদানির সময় যাতে রোগ-জীবাণু না থাকে, এই আইনে সেই সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।