রেইনট্রিতে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানে মদ পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)শাহ মো. আদনান হারুন। হোটেলটিতে দুই ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টির পর অনেকটাই চুপচাপ ছিল মালিকপক্ষ। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় হোটেলটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন আদনান হারুন, যিনি হোটেলটির মালিক ও ঝালকাঠি-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের বড় ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, হোটেল রেইনট্রি’র মূল প্রতিষ্ঠান আল হুমায়রা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (গ্রুপ জিএম) রাজা গোলাম মোস্তফা।
লিখিত বক্তব্যের পর সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আদনান হারুন। যদিও তিনি অধিকাংশ প্রশ্নেরই কোনো সঠিক জবাব দেননি বা এড়িয়ে গেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এমপিপুত্র আদনান হারুন বলেন, ‘গত ১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর হোটেলে তল্লাশি করে কিছুই পায়নি। কিন্তু পরের দিন ১৪ মে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল মদ পেয়েছে বলে দাবি করা হয়। তারা হোটেলে কীভাবে মদ পেলো? এখন সেটা আমাদের প্রশ্ন, আপনাদের (সাংবাদিকদের) বিবেকের কাছেও প্রশ্ন।’
শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ আপনাদেরকে ফাঁসানোর জন্য সঙ্গে করে মদ এনেছিল কিনা? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আদনান হারুন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেছেন তিনি।
হোটেলটিতে মদ পাওয়ার বিষয়ে এমপিপুত্রের মতোই বিস্ময় প্রকাশ করেন মহাব্যবস্থাপক রাজা গোলাম মোস্তফা।
মোস্তফার দাবি, ‘১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হোটেলের প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি চালিয়ে কোনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। কিন্তু পরের দিন ১৪ মে শুল্ক গোয়েন্দারা আমাদের হোটেল থেকে কয়েক বোতল মদ উদ্ধার করে। হোটেল কক্ষে কীভাবে মদ পাওয়া গেলো সেটা আমাদের প্রশ্ন।
হোটেলটির কক্ষগুলো সাউন্ডপ্রুফ
লিখিত বক্তব্যে রাজা গোলাম মোস্তফা দাবি করেন, ‘আমাদের হোটেলে সেদিন ধর্ষণ বা এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি আমরা তা কখনো বলিনি। তবে আন্তর্জাতিক হোটেল কমপ্লায়েন্ট স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আমাদের হোটেলের প্রতিটি কক্ষ সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায় ভেতরে কি হয় বা কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তা বাইরে থেকে জানার সুযোগ ছিলো না। সুতরাং ঘটনার দিন কক্ষ নম্বর ৭০০ এবং ৭০১ এ ন্যাক্কারজনক কোনো ঘটনা ঘটেছিলো কিনা তা আদালতে প্রমাণিত হবে।’
‘ঘৃণ্য অপরাধীদের সহযোগিতা করতে আমরা সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ মুছে দিয়েছি মর্মে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়,’ এমন দাবিও করেন এই কর্মকর্তা।
এই কর্মকর্তার দাবি, ‘আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় কোথাও ৩০ দিনের বেশি সময় ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয় না। আমাদের এখানেও একই নিয়ম। ৩৮ দিন পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ ঘটনার ব্যাপারটি জানতে পারে। কিন্তু ততদিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফুটেজ মুছে গিয়ে নতুন ফুটেজ ধারণ করেছে।’
ধর্ষকদের বিচার দাবি
রাজা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘২৮ মার্চ ধর্ষণের মতো অনাকাঙ্খিত ও জঘন্য ঘটনা ঘটেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে জানতে পারি। আমরা এই ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত সাফাত এবং নাঈমসহ সকল অপরাধীর বিচার এবং শান্তি দাবী করছি। একই সাথে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের প্রত্যয়ও ব্যক্ত করছি।’
এমপিপুত্রের বন্ধু সাফাতের আড্ডাখানা!
হুমায়রা গ্রুপের এই মহাব্যবস্থাপক আরো দাবি করেন, ‘রেইনট্রি হোটেলের পরিচালক (সেল্স ও মার্কেটিং) মাহির হারুন আসামি সাফাতের বন্ধু এবং সেই সূত্রে হোটেল সাফাতের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে এমন অভিযোগ ঠিক নয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হোটেল গ্রাহক আকর্ষণের জন্য জন্ম বা বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কমপ্লিমেন্টারি কেক প্রদান করে থাকে। সেই হিসেবেই সেদিন সাফাতদেরকে কেক দেয়া হয়েছিল। এর সাথে মাহির হারুনের ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতা নেই।