রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
পাট থেকে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ০৪:১৯ pm ০৯-০৩-২০১৭ হালনাগাদ: ০৪:২৫ pm ০৯-০৩-২০১৭
 
 
 


পাটের তৈরি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাটের সোনালী দিন ফিরেছে।

জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পাট পরিবেশবান্ধব, এর থেকে আর উন্নত কিছু হতে পারে না। পাট উৎপাদন ও সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

“পাট থেকে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে তা আমরা রপ্তানি করবো।”

পলিথিনের ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পচনশীল পাটের ব্যাগ আবিষ্কারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পাটের সোনালী দিন ইনশাল্লাহ ফিরে এসেছে।”

অনুষ্ঠানে পাটের শাড়ি পড়ে আসা এবং পাটের হাতব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।   

তিনি বলেন, “পাটের শাড়ি না হলে কিন্তু এক সময় বাংলাদেশে বিয়ে হতো না। পাট পণ্য আমাদের সকল কাজে লাগে। পাটের সব কিছুই লাগে- পাটখড়ি থেকে শুরু করে পাট শাক আমাদের কাজে লাগে।” 

পাট থেকে পণ্য উৎপাদনে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন শুধু ৩৫ রকম পণ্য উৎপাদন করা যায় পাট দিয়ে।”

পাটের জিন রহস্যের উদ্ভাবক প্রয়াত বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমের অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তার থাকাটা খুব দরকার ছিলো। ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর খুব গোপনীয়তার সাথে আমরা এই গবেষণাটি করেছিলাম। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এর ফলাফলটা পেয়েছিলাম; ততক্ষণ প্রচার করিনি। ফলে পাটের উন্নত চাষাবাদের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।”

“আমরা পাটের মেধাসত্ত্ব অধিকার (Patent right) পেয়েছি। পাট এখন বাংলাদেশেরই সম্পদ।”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সোনালী আঁশ পাটকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকসান দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া পাটকলগুলোকে।

ওই সময় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৮৭টি পাটকলের মধ্যে ৬০টি বিক্রি করা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পাটকল নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বিএনপি সরকারের চুক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৯১ সালে বিএনপি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে তারা একটা চুক্তি সই করে। এই চুক্তিটা ছিলো কী? তারা বাংলাদেশে একে একে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেবে। ৯৩ সাল থেকে এই বন্ধের কাজ শুরু হবে এবং গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের নামে পাটকলগুলোর শ্রমিকদের তারা বিদায় দিয়ে দেবে। তার জন্য তারা টাকা পেলো।

“ঠিক একই সময়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ভারতের সাথে চুক্তি করলো; ভারতকে তারা টাকা দেবে নতুন নতুন পাটকল তৈরি করার।”

একই সময়ে করা চুক্তিতে ভারত লাভবান হলেও বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আর যে চুক্তিটা করেছিলো বিএনপির সময়ে বাংলাদেশ সরকার, তাতে আড়াই লক্ষ বেল পাট রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। আর ভারতে যে পাটকল তৈরি হবে, তারা আড়াই লক্ষ বেল পাট বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।”

২০০২ সালের ৩০ জুন এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী মিল বন্ধ করে দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এতে প্রায় ২৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। 

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধ থাকা বস্ত্র ও পাটকলসমূহ চালুর উদ্যোগ নেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বন্ধ থাকা খুলনার খালিশপুর জুটমিল, সিরাজগঞ্জের কওমী জুটমিলসহ ৫টি পাটকল ও ২টি বস্ত্রকল চালু করেছি। এতে প্রায় ২১ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”

পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৩০টিরও বেশি দেশে। গত বছর দেশের পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি আয় ছিল সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে কাঁচা পাটের দাম মণপ্রতি একহাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকার পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার ও চাহিদা বৃদ্ধির জন্য ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ এবং ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩’ কার্যকর করেছে। ইতোমধ্যে ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।”

ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে পাটের বহুমুখীকরণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য দশটি ক্যাটাগরিতে দশ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়াও পাট নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা।

আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণের পর প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেন এবং বহুমুখী পাট পণ্যের মেলা উদ্বোধন করে তা ঘুরে দেখেন।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT