টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরিয়ে হতাহতদের উদ্ধারে কাজ চলছে এখনও।
নতুন করে কয়েকজনের লাশ উদ্ধারের পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫০ জন হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রতীশ চন্দ্র রায় বুধবার রাতে বলেন, “এখন পর্যন্ত ১৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
“এর মধ্যে রাঙামাটিতে ১০৫ জন, চট্টগ্রামে ২৯ জন, বান্দরবানে ৬ জন, কক্সবাজারে দুজন এবং খাগড়াছড়িতে একজনের লাশ উদ্ধারের তথ্য পাঠানো হয়েছে।”
এছাড়া দেয়াল চাপা, গাছ চাপা ও পানিতে ভেসে আরও ৭ জন মারা গেছেন বলে জানান তিনি।
এর আগে বিকালে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তখন দায়িত্বরত কর্মকর্তা দলিল উদ্দিন ১৪৫ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিলেন।
বান্দরবানে আগের দিন নিখোঁজ মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার হওয়ায় সেখানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে নয়জন হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য। আর খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের দুটি ঘটনায় দুইজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার থেকে দেশের দক্ষিণ পূর্বের জেলাগুলোতে ভারি বৃষ্টির কারণে মাটি সরে গিয়ে সোমবার রাত থেকে এই তিন জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ধস নামে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দেখা দেয় ভয়াবহ বিপর্যয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বৃষ্টির মধ্যেই মঙ্গলবার ভোর থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।
রাতে আলোর অভাবে অভিযান স্থগিত রাখার পর বুধবার সকালে আবারও মাটি সরিয়ে নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয় রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম ও বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম জানান।
দিদারুল আলম আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধিকে জানান, শহরের ভেদভেদিসহ যেসব স্থানে মঙ্গলবার মাটি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি, সেখানে বুধবার সকালে তারা কাজ শুরু করেন।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বুধবার বিকালে তার কার্যালয়ে এক সভায় বলেন, পাহাড় ধসের এলাকায় উদ্ধার কাজ বৃহস্পতিবারও চলবে।
পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে রাঙামাটিতেই। সদর, কাউখালী, কাপ্তাই, জোড়াছড়ি ও বিলাইছড়ি মিলিয়ে ১০০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মানজুরুল মান্নান জানিয়েছেন।
এর মধ্যে মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের কাছে পাহাড় ধসের ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে ফের ধসে নিহত হন দুই কর্মকর্তাসহ চার সেনা সদস্য।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নের মইন্যারটেক ও পাহাড়তলী ঘোনা, রাজানগর ইউনিয়নের জঙ্গল বগাবিল, চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়ি ও ছনবনিয়া এলাকায় পাহাড় ধসে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বান্দরবান শহরের কালাঘাটায় এক কলেজছাত্র, লেমুঝিরি ভিতর পাড়ায় একই পরিবারের ৩ শিশু এবং সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরু সম্বোনিয়া পাড়ায় তিনজনের লাশ পাওয়া যায় মঙ্গলবার।
এছাড়া জেলেপাড়ায় পাহাড় ধসের পর নিখোঁজ মা কামরুন্নাহার ও মেয়ে সুফিয়ার লাশ বুধবার উদ্ধার করা হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
এদিন রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৫০ লাখ টাকা, ৫০০ বান্ডেল টিন ও ১০০ টন চাল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন মায়া, সচিব শাহ কামালসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে রয়েছেন।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
এছাড়া তিন জেলায় ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে চার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে সেখানে রাখা হয়েছে বলে আগের দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ত্রাণমন্ত্রী মায়া।