বিদ্যুতের দুটো জাতীয় সঞ্চালন লাইন বিকল থাকায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের অন্তত ৩৪ জেলার বাসিন্দাদের কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুত্হীন থাকতে হয়েছে গতকাল। দীর্ঘ সময় বিদ্যুত্ না থাকায় সেখানকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে হাসপাতাল ও জরুরি সেবাকেন্দ্রগুলোতে বড় সঙ্কট তৈরি হয়। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। এর আগে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সঞ্চালন কেন্দ্রে বিপর্যয় দেখা দিলে বিদ্যুিবহীন হয়ে পড়ে গোটা দেশ। প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সহকারী ম্যানেজার (জনসংযোগ) এবিএম বদরুদ্দোজা খান গতকাল সকালের খবরকে জানান, বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুত্ সরবরাহে বিভ্রাট দেখা দেয়। ফলে পিজিসিবির রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল জোনে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে ওই এলাকার সব বিদ্যুেকন্দ্রে উত্পাদনও থেমে যায়। এরপর এলাকা ভেদে দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ থাকে। পিডিবির হিসাবে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে ২ হাজার ৬৬৫ মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতার ৩৭টি বিদ্যুেকন্দ্র আছে। সোমবার এসব কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন হয়েছে। এছাড়া আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে। পিজিসিবি সূত্র জানায়, কালবৈশাখী ঝড়ে সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে একটি বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ে ২৩০ কিলোভোল্টের উচ্চ চাপ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই লাইন মেরামত করার মধ্যেই গতকাল ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইন ‘ট্রিপ’ করলে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশের জেলাগুলো বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ে। সূত্র মতে, জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুত্ সঞ্চালনের জন্য দুটি ২৩০ কেভির লাইন আছে। একটি আশুগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জে, আরেকটি ঘোড়াশাল থেকে ঈশ্বরদীতে। ঝড়ে আশুগঞ্জ থেকে সিরাজগঞ্জ লাইনের টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঘোড়াশাল থেকে ঈশ্বরদী লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ লাইনটি ওভারলোডের কারণে ট্রিপ করে। ফলে ওই এলাকার প্রায় সব বিদ্যুেকন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিদ্যুত্ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যুেকন্দ্র চালু ও সরবরাহ করতেও কিছুটা সময় লাগে। এ কারণে কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুত্ পৌঁছতে কিছুটা দেরি হতে পারে। রাত পৌনে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ বেশ কয়েকটি এলাকা বিদ্যুিবহীন অবস্থায় ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি : দেশের অর্ধেক জেলায় বিদ্যুত্ বিভ্রাটের ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (ট্রান্সমিশন-২) মো. কামরুল হাসান এ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।