রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
বিবিআইএন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদনে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
প্রকাশ: ১১:১৫ am ১৯-০৪-২০১৭ হালনাগাদ: ১১:১৭ am ১৯-০৪-২০১৭
 
 
 


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) এর মধ্যে সম্পাদিত মোটরযান চুক্তির অনুস্বাক্ষর প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ভুটানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এ চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ ভুটানের জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জিয়ালিয়ং তোসখাঙ্গ এর রয়্যাল ব্যাংকুয়েট হলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাসো থেসারিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একথা বলেন।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রেক্ষিতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, তার দেশও বিবিআইএন প্রক্রিয়ার সঙ্গে একাত্ম এবং এ বিবিআইএন যোগাযোগ কার্যকরভাবে সম্পন্ন হলে তা কিভাবে জলবায়ু সমস্যার সমাধানে কার্যকর হয় তারই প্রতীক্ষায় রয়েছেন।

পর্যটন বিষয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিভাবে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন করিডোর প্রতিষ্ঠা করা যায় যাতে করে এর সম্ভবনাগুলোকে আরো কাজে লাগানো সম্ভব হয় সেজন্য ভুটান বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারে।”

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের উদ্যোগে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতির জন্য ভুটানের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “দুই দেশের মধ্যে কৃষি, দ্বৈতকর প্রত্যাহার, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সম্পর্কিত যেসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলো দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে করে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে।”

তিনি বলেন, “ভুটান ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের পর থেকেই এ দুই দেশের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।”

এ সম্পর্ককে আরো শক্ত ভীতের ওপর দাঁড় করানোর বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, “ভুটান ইতোমধ্যেই রাজধানী থিম্পুতে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ভবন গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশকে জমি দিয়েছে।”

পররাষ্ট্র সচিব জানান, দুই দেশের যোগাযোগ খাতকে আরো শক্তিশালী করার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়টি দুইনেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচিত হয়।

পাশাপাশি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জলবিদ্যুৎ বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে জলবিদ্যুৎ এ অঞ্চলের জন্য গেম চেঞ্জার হিসেবে বিবেচিত হবে।”

তিনি বলেন, “ভুটানে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে এবং সেই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে তিনটি দেশেই যাবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সমতা আনয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ভুটানে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে বলেন, “বাংলাদেশের সফটওয়্যার কোম্পানি ইতোমধ্যেই ভুটানে কাজ করছে এবং তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও বেশ ভালো।”

এ সময় বুড়িমারী স্থলবন্দরের অভ্যন্তরীণ কাষ্টমস হাউজে বিলম্বের বিষয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।

ভুটানের চতুর্থ রাজার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক ট্রাস্ট ফান্ড করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশের সাহায্য এবং সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

শেখ হাসিনা ভুটানকে এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ভুটানে কাজের সুযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, “ভুটানে কর্মরত একজন বিদেশি চিকিৎসক দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ব্যতিরেকেই প্রতিমাসে প্রায় তিন হাজার ডলার করে আয় করতে সক্ষম হন।”

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “যদি বাংলাদেশের চিকিৎসকদের কেউ আগ্রহী হন তবে ভুটানে তাদের কাজের সুযোগ রয়েছে।”

ভূটানের প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সাংস্কৃতিক চুক্তিটি নবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “এর মাধ্যমেই ভুটান এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।”

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে ফাইবার অপটিক কানেক্টিভিটির বিষয়টি উত্থাপন করলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তিনটি দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার প্রস্তাব করেন।

বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ভুটান, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সাব রিজিওনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের বিষয়টিও উত্থাপন করেন।

বিমসটেক বিষয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে আঞ্চলিক সহযোগিতার অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বিমসটেককে সমর্থন করি এবং এর মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোহিতার ক্ষেত্রকে আরো শক্তিশালী করা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী এসময় ভুটানের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী রয়্যাল ব্যাংকুয়েট হলে তার সম্মানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভোজ সভায় যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসর্ডার বিয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিনদিনের সরকারি সফরে বর্তমানে ভুটানে অবস্থান করছেন।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT