২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবন ধসে পড়ে।
ভবনে আগের দিনই ফাটল দেখা যায়। এ কারণে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়।
পরদিন শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে চাননি। প্রবেশ করতে চাননি মরণফাঁদের ভবনে।
ভবনের কিছু হয়নি বলে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন মালিকেরা। সাতসকালে কাজও শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রায় আধা ঘণ্টা পর পুরো ভবন ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন হাজারো শ্রমিক। ঘটে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিল্পবিপর্যয়।
আজ থেকে চার বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা নামের বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হন হাজারো শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছেন।
সাভার বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষে ছিল রানা প্লাজার অবস্থান। নয়তলা ভবনটির তৃতীয় থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত ছিল পোশাক কারখানা। নবম তলা ছিল নির্মাণাধীন। নিচের দুটি তলায় ছিল মার্কেট, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়।
ঘটনার দিন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের হরতাল ছিল। রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানার আহ্বানে কারখানার মালিকেরা সকালে শ্রমিকদের ডেকে আনেন। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ভাষ্য, ভবনে আগের দিন ফাটল দেখা যাওয়ায় পরদিন তাঁরা কাজে যোগ দিতে চাননি। কিন্তু মালিকেরা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন।
রানা প্লাজায় পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। এগুলো হলো ইথারটেক্স, নিউওয়েভ বটমস্, নিউওয়েভ স্টাইল, ফ্যানটম অ্যাপারেলস ও ফ্যানটম ট্যাক। ঘটনার সময় কারখানাগুলোয় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। সকাল নয়টার কিছু আগে ভবনটি ধসে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত শ্রমিকদের বয়ানে ভবনধসের মুহূর্তের লোমহর্ষক বিবরণ পাওয়া যায়। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, ভবনটি হুড়মুড় করে তাসের ঘরের মতো ধসে যায়।
সকালে হঠাৎ রানা প্লাজার স্থান থেকে ধুলা উড়তে দেখেন আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। ভবনের গ্লাস ও ইস্পাতের পাতগুলো সড়কে ছিটকে পড়তে দেখেন তিনি।
সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে রানা প্লাজার সামনে অবস্থান করছিলেন মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি। কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রচণ্ড শব্দে ভবনটি ধসে যেতে দেখেন তিনি। তাঁর বিবরণ অনুযায়ী, ভবনটি ধসের সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেতর থেকে ভেসে আসে মানুষের আর্তনাদ।
ভবনধসের পর স্থানীয় লোকজন প্রথম উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন। পরে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। একপর্যায়ে উদ্ধারকাজে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী। র্যাব, বিজিবি, রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য সংস্থাও উদ্ধারকাজ করে। উদ্ধার তৎপরতায় সাধারণ মানুষ তাদের জীবন বাজি রাখে। ১৪ মে রানা প্লাজার উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।