বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ মন্তব্য করেন।
‘প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি বৈঠক করেছেন এবং তাঁদের বুঝিয়েছেন। দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন যে এটা সংবিধানে নেই’, বলেন রিজভী।
‘প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে রাষ্ট্রপতিও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ১১ দফা অভিযোগ উত্থাপন সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনটিকে এভাবে কালিমালিপ্ত করার ঘটনা ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি’, যোগ করেন রিজভী।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যদি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এত অভিযোগ পেয়েই থাকেন, তাহলে তিনি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করলেন না কেন—এ প্রশ্ন এখন আইন অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালতের সর্বসম্মত রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হওয়ার কথা। নিয়ম হলো, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে অভিযোগগুলো রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল বিভাগে তদন্তের জন্য পাঠাবেন। তদন্তের শেষে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে বিচারপতিকে অপসারণ করবেন। আর যদি প্রমাণিত না হয়, তাহলে তিনি পদে বহাল থাকবেন।’
‘রাষ্ট্রপতি এ ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি কেন আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করে অভিযোগ শোনালেন, তা এখন আর মানুষের বুঝতে বাকি নেই। তাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ। তিনি দেশে থাকতে এসব অভিযোগ তোলা হলো না কেন? আর এসব অভিযোগ তো মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো। এত দিন এসব অভিযোগ তোলা হলো না কেন?’
সরকারপ্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধাচরণ করছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে যে বিবৃতি জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, সেই অস্থিরতা থেকেই সরকার এখন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এত অভিযোগের নাটক সাজাচ্ছে। তা জনগণ ঠিকই বোঝে। আবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটিও ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এদিকে ওই দিনই অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, প্রধান বিচারপতির ফিরে এসে দায়িত্ব নেওয়া সুদূরপরাহত।’
‘গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন, অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি স্বপদে বসতে পারবেন না। আবার গতকাল আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পূর্বে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনের রদবদল শুধু প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। তাহলে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপনও বেআইনি। এখন আদালত প্রাঙ্গণে যা ঘটছে, তা হচ্ছে সরকারপ্রধানের একক কর্তৃত্বে বিচার বিভাগকে অধীন করার জন্য যাবতীয় আয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হবিব-উন-নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, বিএনপির সহসাংগঠনিক আবদুস সালাম প্রমুখ।