সিলেটে জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ অভিযানকালে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে ক’দিন ধরেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন। অবশেষে প্রিয় দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
সিলেট, ঢাকা ও সিঙ্গাপুরের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দিনগত রাতে মৃত ঘোষণা করা হয় সেনাবাহিনীর এ লড়াকু কর্মকর্তাকে। এ পর্যায়ে তুলে ধরা হচ্ছে অভূতপূর্ব সফল সামরিক কর্মকর্তা লে. কর্নেল আজাদের জীবন বৃত্তান্ত।
আজাদ ১৯৭৫ সালের ৩০ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ৭ জুন ৩৪তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পরবর্তী নবীন অফিসার হিসেবে ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন আবুল কালাম আজাদ।
পরবর্তী সময়ে তিনি সেনাসদর, প্রশাসনিক শাখা, জাতিসংঘ মিশন ব্যানব্যাট-৫ (আইভরিকোস্ট), ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন, ১৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন কমান্ডোও ছিলেন।
২০১১ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আজাদ র্যাব-১২ এর কোম্পানি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের (টিএফআই সেল/গোয়েন্দা শাখা) উপ-পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। সে বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
আজাদ কর্ম জীবনে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা ও সুনামের সঙ্গে পালন করেছেন।
গত ২৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ পরিচালিত ‘অপারেশন টোয়াইলাইটে’ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দলসহ ঘটনাস্থলে গমন করেন। ঘটনাস্থলের আনুমানিক ৩০০ গজ দূরে জঙ্গিদের রেখে যাওয়া বোমা বিস্ফোরিত হলে এর একটি স্পি¬ন্টার লে. কর্নেল আজাদের বাম চোখ ভেদ করে মস্তিস্কে আঘাত হানে।
তাৎক্ষণিক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক জরুরি ভিত্তিতে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।
পরের দিন ২৬ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ২৯ মার্চ রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগেই দেশে ফেরত আনা হয় এবং পুনরায় সিএমএইচে ভর্তি রাখা হয়।
কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ মার্চ দিনগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।