শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস
প্রকাশ: ১০:২০ am ০৭-০৬-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:২৪ am ০৭-০৬-২০১৭
 
 
 


আজ ঐতিহাসিক ৭ জুন, ছয় দফা দিবস। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিবাদী আত্মত্যাগে ভাস্বর একটি দিন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনটি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে। আর এ ছয় দফার মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন। সেদিন পাকিস্তানের তত্কালীন সেনাশাসক জেনারেল আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফা মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ছয় দফার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভায় ৭ জুন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মাসব্যাপী ৬ দফা প্রচারে ব্যাপক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। ৭ জুন তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল বেভারেজের শ্রমিক সিলেটের মনু মিয়া পাকিস্তান স্বৈরশাসকের গুলিতে প্রাণ হারান। এতে বিক্ষোভের প্রচণ্ডতা আরো বাড়ে। তেজগাঁওয়ে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আজাদ এনামেল এ্যালুমিনিয়াম কারখানার শ্রমিক আবুল হোসেন ইপিআরের গুলিতে শহীদ হন।
 
একই দিন নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের কাছে পুলিশের গুলিতে মারা যায় আরো ৬ শ্রমিক। আন্দোলনের প্রচণ্ডতায় লাখো বাঙালি মাঠে নেমে পড়ে। সন্ধ্যায় জারি করা হয় কারফিউ। রাতে হাজার হাজার আন্দোলনকারী বাঙালিকে গ্রেফতার করা হয়। এমনিভাবে ৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শহীদের রক্তে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্দোলন।
 
কর্মসূচি
 
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং দুপুর আড়াইটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস পালন উপলক্ষে গৃহীত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের সকল শাখাসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
 
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
 
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঐতিহাসিক ৬ দফা শুধু বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণারও উত্স। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে তথা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি ৬ দফার দাবি আদায়সহ জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিহত সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
 
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহাসিক ৭ জুন সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ জুন এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬-দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। তিনি বলেন, বাঙালির মুক্তিসনদ ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে এদিন আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তত্কালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। প্রধানমন্ত্রী এই দিনে ঐতিহাসিক ৭ই জুনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT