নামাজ রোজাসহ সব ইবাদত এমনকি সামাজিক কল্যাণমূলক কাজেরও একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত সর্বশক্তিমান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। অন্যের কাছে নিজেকে মুমিন প্রমাণের জন্য কিংবা যশ খ্যাতি লাভের জন্য কেউ ইবাদত বা ভালো কাজ করলে তা রিয়া বা লোক দেখানো কাজ বলে বিবেচিত হবে। এ ধরনের কাজ যারা করে পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৪২নং আয়াতে তাদের মোনাফেক বলে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে ‘নিশ্চয়ই মোনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে, বস্তুত, তিনি তাদেরকে এর শাস্তি দেন আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়, কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে। ’ উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে, সালাত বা নামাজের ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। শুধু নামাজ নয় অন্য সব ইবাদতের ক্ষেত্রেও শৈথিল্য এবং লোক দেখানো প্রবণতা আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্য। ইমাম কাতাদা (র.) বলেন : ‘বান্দা যখন রিয়ায় লিপ্ত হয়, আল্লাহ তখন বলেন : ‘দেখ, বান্দা আমার সঙ্গে কেমন করে ঠাট্টায় মত্ত হয়েছে। ’ বর্ণিত আছে, এক লোককে মাথা নিচু করে চলতে দেখে হজরত ওমর (রা.) বললেন : ‘তুমি ঘাড় সোজা করে চল। মাথা নুইয়ে রাখায় তো নম্রতা নেই, নম্রতা থাকে হৃদয়ে। ’ কথিত আছে, এক লোককে মসজিদে বসে সেজদায় গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে দেখে হজরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) বললেন : ‘তোমার ঘরে বসে এ ধরনের কান্নাকাটি করলেই তো ভালো হতো। ’ ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল মোবারক আস্সওরী (রা.) বলেন’, ‘তোমার রোনাজারি রাতের বেলা প্রকাশ কর, কেননা দিনে এ কাজ হয় মানুষের জন্য, আর রাতে তা হয় আল্লাহর জন্য। ’ হজরত আলী (রা.) বলেন : ‘রিয়াকারীদের পরিচয় হচ্ছে তিনটি : তারা একা হলে অলস ও অমনোযোগী হয়ে পড়ে, অথচ জনসমক্ষে সক্রিয় থাকে। বাহবা বা প্রশংসা পেলে বেশি বেশি নেক কাজ করে, আর দোষত্রুটি দেখিয়ে দিলে এবং সমালোচনা করলে নেক কাজ কম করে। ’ হজরত ফুযাইল বিন আয়ায (রা.) বলেন : ‘মানুষের সন্তোষ লাভের জন্য নেক আমল শেরকের পর্যায়ভুক্ত, মানুষের রাগের ভয়ে নেক আমল পরিত্যাগ করা হচ্ছে রিয়া। এ দুই অবস্থা থেকে বেঁচে থাকাই হচ্ছে এখলাস। ’ মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রিয়ার কবিরা গুনাহ থেকে নাজাত এবং পরিপূর্ণ ইখলাস অর্জনের তৌফিক দিন। আমিন।