মৃতের সম্পদ বণ্টনের সুনির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খল কোনো বিধান ইসলাম পূর্বকালে পৃথিবীর কোথাও প্রচলিত ছিল না। সেই অন্ধকার যুগে সাধারণত পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যরা মৃতের সব সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখত। অধিকাংশ পরিবারে নারী ও শিশুরা মৃত আত্মীয়ের সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিত হতো।
মহান আল্লাহ সদয় হয়ে সূরা নিসা অবতীর্ণ করে মৃতের সম্পদের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা শেষ নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের দান করেন। এ সূরার দ্বারা তিনি সুনির্দিষ্ট করে দেন, কেউ মারা গেলে তার কোন কোন আত্মীয় তার সম্পদের কতটুকু অংশ পাবে। বিষয়টি মহান আল্লাহর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সংক্রান্ত বিধানগুলো সরাসরি তিনি নিজেই বলে দিয়েছেন। নবীকে পর্যন্ত এখানে বলার কোনো সুযোগ দেননি।
ওয়ারিশদের অংশ বর্ণনা করার পর মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘এটা আল্লাহর সীমানা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে মান্য করবে তিনি তাকে চিরকালের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশে পানির অসংখ্যা ঝর্ণা ও নদী প্রবাহিত। আর এটাই মহা সফলতা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করবে, তার সীমানা লংঘন করবে; তিনি তাকে চিরকালের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ -সূরা নিসা: ১৩-১৪
এমন স্পষ্ট ও শক্ত কথা অন্য কোনো আমলের ব্যাপারে বলা হয়নি। এ আয়াতে সম্পদ বণ্টনের কোরআনি বিধানকে বলা হয়েছে- আল্লাহর সীমানা। আর সীমানা লংঘনকারীর জন্য স্থায়ী জাহান্নামের সতর্কবার্তা শোনানো হয়েছে। তাই এ আয়াতের ভাষ্যমতে, সম্পদ বণ্টনের কোরআনি বিধান অমান্যকারীরা চিরজাহান্নামি।
মৃতের সম্পদের বিষয়ে এমন বিধান থাকলেও সম্পদ বণ্টনের ইসলামের বিধান ও কোরআনের নির্দেশ উপেক্ষা করা হয়। সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে সাধারণত যে সব পয়েন্টে কোরআনি বিধান অনুসরণ করা হয় না-
১. ভাইয়েরা পিতার সম্পদ ভাগ করার সময় বোনদের ঠকায়। কখনও মাফ চেয়ে নেয়, কখনও নামমাত্র মূল্যে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য করে; আবার কখনও প্রাপ্ত অংশের সামান্য দিয়ে বিদায় করে দেয়।
২. ভাতিজারা দাদার সম্পদ ভাগ করার সময় ফুফুদের ঠকায়। তাদের সঙ্গে বোনদের মতোই আচরণ করা হয়।
৩. জামাতারা স্ত্রীদের সম্পদ ভাগ করার সময় শ্বশুড়-শাশুড়িকে তাদের মেয়ের পরিত্যক্ত সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিত করে।
৪. সৎ সন্তানরা পিতার সম্পদ ভাগ করার সময় সৎ মাকে ঠকায়।
৫. মেয়েদের ঠকানোর উদ্দেশ্যে পিতা জীবদ্দশায় ছেলেদের নামে সম্পদ লিখে দেয়।
৬. দ্বিতীয় স্ত্রীকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে জীবদ্দশায় ১ম স্ত্রীর সন্তানদের নামে সম্পদ লিখে দেয়।
৭. দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে সম্পদ লিখে দিয়ে ১ম স্ত্রীর সন্তানদের ঠকায়।
৮. ভাই-ভাতিজাদের বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে জীবদ্দশায় কন্যা সন্তানদের নামে অথবা স্ত্রীর নামে সম্পদ লিখে দেয়।
৯. স্থাবর সম্পদ ভাগ করা হলেও অস্থাবর সম্পদ ভাগ করা হয় না। অথচ সকল অস্থাবর সম্পদও ভাগ করতে হয়। এমনকি নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রও অংশ অনুপাতে ভাগ করতে হবে। যা ভাগ করা সম্ভব নয় অথবা ভাগ করলে ব্যবহার উপযোগী থাকবে না- তা নিলামে বিক্রি করে তার মূল্য ভাগ করতে হবে।