জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন নিষ্পত্তি করে বুধবার (০৮ মার্চ) আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ভূইঁয়া। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত খালেদা জিয়ার আবেদন নিষ্পত্তি করে মামলাটি তিন নম্বর থেকে পরিবর্তন করে মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর উচ্চ আদালতের এই আদেশ বিচারিক আদালতে পৌঁছার পর ৬০ দিনের মধ্যে মামলাটির বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে।
এ আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আদালতের এ আদেশে খুশি। এখানে আপিল করার কিছু নেই। মামলার কার্যক্রমেও কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হবে না। মামলা যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় আবার নতুন আদালতে শুরু হবে। আমাদের দরকার মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হওয়া। উচ্চ আদালত সে আদেশও দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, ৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে। তবে দুদক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
এর আগে এ মামলায় আদালত পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদনের ওপর ০৫ মার্চ শুনানি আদেশের জন্য ০৮ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত। গত ০৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে এ আবেদন উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। পরে বেঞ্চ পরিবর্তন হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি শুরু হয়।
হাইকোর্টে আবেদনের পর খালেদার আইনজীবীরা বলেছিলেন, ওই মামলা যে বিচারিক আদালতে চলছে, সে আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে একটি আবেদন করা হয়। কিন্তু গত ২ ফেব্রুয়ারি আবেদনটি খারিজ করেন বিচারিক আদালত। এরপর আদালত পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে জিয়া অরফানেজ ছাড়াও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।
ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।