আগামী জানুয়ারি থেকে সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা থেকে সরে দাড়াঁনোর আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
সোমবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “গ্যাসের মূল বৃদ্ধি করা হলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুতরাং অযৌক্তিক গণবিরোধী মূলবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সরকার অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের মূল দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৯ মাসের ব্যবধানে আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মানুষকে হতবাক করেছে।”
রিজভী বলেন, “গ্যাস খাতে সরকারের কোনো লোকসান নেই। বরং মোটা অংকের মুনাফা হচ্ছে। কোম্পানিগুলো যেমন মুনাফা করছে, তেমনি সরকারের কোষাগারে দিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। এরপরও কেন গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে?”
গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে জনজীবন অসহায় হয়ে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সংবাদে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এমনিতে সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছে, তার ওপর বছরের শুরু থেকে গ্যাসের দাম বাড়ালে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বেড়ে যাবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে জনগণের অতি প্রয়োজনীয় নিত্যব্যবহার্য সবকিছুর ওপর।”
বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে পরিবহন ভাড়া, সেইসঙ্গে দাম বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের। ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর হবে তিনি জানান।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “গ্যাসের দাম বাড়ালে তা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারকে ব্যাহত করবে। উৎপাদন খরচ বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। চাপে পড়বে অর্থনীতি। এমনিতে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় কারখানা চালু রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাসা বাড়িতেও রান্নার কাজ ব্যহত হচ্ছে। অথচ প্রতি মাসে গ্যাসের বিল ঠিকই গুণতে হচ্ছে।”
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা মন্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, “ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত বছর গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে বস্ত্রখাতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে তাদের অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, গ্যাস উৎপাদান ও সরবরাহের এ সংকটকালে সর্বোচ্চ প্রস্তাবিত ১৪০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি, চামড়া শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ অন্যান্য গ্যাসনির্ভর শিল্প-কলকারখানার উৎপাদনকে ব্যহত করবে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি সমতা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ নিরুৎসাহিত হতে পারে। তৈরি পোশাক খাত এবং অন্যান্য আমদানি বিকল্প রপ্তানি নির্ভর শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার সম্ভাবনা কমে আসবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের দামও বৃদ্ধি হবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে কৃষি উৎপাদনের ওপর।”
বিএনপিরর মুখপাত্র অভিযোগ করেন, “গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লুটপাট, সরকারি দল ও ক্ষমতামীনদের স্বজনদের পকেট ভারি করতে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আব্দুস সালাম আজাদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।