দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে ক্লিন ইমেজের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেবে। সকালের খবরকে এমনটিই জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন-অতীতমুখী কিংবা বস্তাপচা রাজনীতি নয়, পরিবর্তনের রাজনীতি করতে চায় বিএনপি। ইতোপূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দেশবাসীর উদ্দেশে উপস্থাপন করেছেন। ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি পজিটিভ রাজনীতি করবে তা-ই নয়, তার আগেই এর নমুনা জনগণকে দেখাতে চায়। এ কারণে বিএনপি আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ক্লিন ইমেজের নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতাদের প্রার্থী করবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না। তবে নির্বাচন কমিশন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে দল। পাশাপাশি তখনই স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুর মতো স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছিল দল। সবশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি বরিশালে আহসান হাবিব কামাল, খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেটে আরিফুল হক ও গাজীপুরে অধ্যাপক এমএ মান্নানকে মনোনয়ন দেয়। তারা বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। তবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি। তবে এবার এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কটের সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি বলেন, গতবার রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এবার আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দুইজন যোগ্য প্রার্থী আছেন। এদের মধ্যে রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন ও সহ-সভাপতি বাবলা। যে কয়টি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে তার মধ্যে একটি ছাড়া সব কটিতে বিএনপির মেয়র আছেন। সেসব সিটিতে যারা মেয়র আছেন তারাই কি প্রার্থী হবেন নাকি নতুন প্রার্থী দেওয়া হবে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সকালের খবরকে বলেন, বর্তমানে যারা মেয়র রয়েছেন তারা ব্যাপক জনপ্রিয়। দলের দুঃসময়ে তারা বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র হয়েছেন। তাই দুয়েকটি এলাকায় পরিবর্তন হলেও হতে পারে। তবে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না। ২০১৩ সালে জয়ী সিটি মেয়রদের মধ্যে একমাত্র ভাগ্যবান বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল। তিনি এখন পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া খুলনার মনিরুজ্জামান মনি একবার, সিলেটের আরিফ ও রাজশাহীর বুলবুলকে দুইবার এবং গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে তিনবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বহিষ্কার করেছে। তবে তারা আদালতের নির্দেশে আবার তাদের দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন। গাজীপুরের মেয়র মান্নান গত চার বছরে মাত্র ১৮ মাস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। ২২ মাসের বেশি সময় তাকে জেলে কাটাতে হয়েছে। তার জায়গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কমিশনার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ ৬ জুলাই তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এমএ মান্নান। পরে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে দায়িত্ব বুঝে পেয়েছেন। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির কোনো কোনো নেতার আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতাসীন ভোটারবিহীন সরকার বারবার বহিষ্কার করেছে। জনপ্রতিনিধিদের সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয় না, ভবিষ্যতেও দেবে না।