ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাতভর তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। এসময় হলের আবাসিক শিক্ষকদের ধাওয়া এবং প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। মারধরের করা হয় এক সাংবাদিককে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের বিভিন্ন কক্ষে জোর করে শিক্ষার্থীদের ওঠানো নিয়ে সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
হল সূত্র জানায়, বিজয় একাত্তর হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের আসনবিন্যাস হল প্রশাসনই করে থাকে। ছাত্রসংগঠনগুলো ইচ্ছে করলেই এ হলের কোনো কক্ষে শিক্ষার্থী তুলতে পারে না। ছাত্রলীগ অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
সবশেষে বিজয় একাত্তর হলের খেলার কক্ষটিকে গণরুম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে ছাত্রলীগ।
গণরুমে হল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের কর্মী বা অনুসারীদের ওঠায়। তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়। এসব কক্ষে সাধারণত ধারণক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি শিক্ষার্থী থাকেন।
বিজয় একাত্তর হলের গণরুমে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন।
হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সোমবার রাত ১২টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের উত্তর পাশের যমুনা ব্লকে প্রত্যেক কক্ষে এক-দুজন করে শিক্ষার্থী জোর করে ওঠায় ছাত্রলীগ।
খবর পেয়ে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক ছুটে এসে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন।
এসময় ছাত্রলীগের কর্মীরা একজন আবাসিক শিক্ষককে ‘শিবির’ বলে ধাওয়া দেন বলেও জানান কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী।
পরে রাত সোয়া ১টার দিকে হলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আ জ ম শফিউল আলম ভূইয়া। তিনি হলে নিজের কক্ষে প্রবেশ করলে হল শাখা ছাত্রলীগ মিছিল বের হয়। একপর্যায়ে প্রাধ্যক্ষের কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান প্রাধ্যক্ষের কক্ষে যান। তারা হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে হলের ছাত্রদের নিজ নিজ কক্ষে ফেরত যেতে নির্দেশ দিতে বলেন।
ভোর ৪টা পর্যন্ত হলের ভেতরের মাঠে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন।
ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে হলের শিক্ষার্থী ও ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইমরান হোসাইনকে মারধর করা হয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ইমরানের কক্ষে ছাত্র তোলার চেষ্টা করলে এতে তিনি বাধা দেয়ার তাকে মারধর করা হয়।
হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফকীর রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার বলেন, “আসন না পাওয়া নতুন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন কক্ষে উঠেছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, “যারা এসব ঘটিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”