নির্বাচনের দুই বছর আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ক্যাম্পেইন শুরু করেছে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নৌকা ডুবে গেছে, এই নৌকাকে হাজার লোক দিয়ে টেনেও তুলতে পারবে না।’
শনিবার রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েল সেন্টারে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের স্মরণে এক আলোচনা সভায় ও ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নিজেরা হেলিকপ্টারে বিভিন্ন জায়গায় উদ্বোধনের নামে যাচ্ছেন, কিছু উদ্বোধন করছেন। আর সেখানে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের নামে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। নৌকা যে ডুবে গেছে- এটা বুঝতে পারছেন না। এই নৌকা ডুবে গেছে, এই নৌকাকে হাজার লোক দিয়ে টেনেও তুলতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘নৌকার সঙ্গে যাদের রেখেছেন, আশেপাশে যারা আছে, আপনার ডানে-বায়ে যারা আছে, যারা অন্য দল করে আপনার দলে এসেছে-তারা কী জিনিস। এসব লোককে দিয়ে দেশের কিছু হবে না, এরা দেশের কিছু করতে পারে না। আপনিও পারবেন না।’
এ সময় নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ। ঈদে মানুষ গ্রামে যায়। দেখেছেন রাস্তাঘাটের যে দুরাবস্থা। পত্রিকায় ছবি দিয়েছে পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা ১০ ঘণ্টায় অতিক্রম করতে হচ্ছে। আর যানজট থাকলে ১৫-২০ ঘণ্টা লেগে যায়। গাড়িতে যাত্রীদের কী দুরাবস্থার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।’
পাবর্ত্য জেলায় পাহাড়ধসে সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘ভূমিধসে মানুষগুলো মারা গেলো, তাদের উদ্ধার করা, তাদের পুনর্বাসনে বর্তমান সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা আমরা দেখছি না, কোনো দায়িত্ববোধও দেখছি না। জনগণের নয়, আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত।’
চালের মূ্ল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘চালের দাম যে এতো বেড়েছে তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার, কেনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনও করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জাগপার সভানেত্রী রেহানা প্রধানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জোট নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এনপিপি’র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তাজা, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকীব, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভার ২০ দলীয় জোটের শরিক মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার পর মূলমঞ্চে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাগপার সদ্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের সহধর্মিনী অধ্যাপক রেহানা প্রধান, তার মেয়ে ব্যারিস্টার তাহমিয়া প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমানসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
ইফতারে জাগপার জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদুর রহমান খান, আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, রাকিব উদ্দিন চৌধুরী মুন্না, খন্দকার আবিদুর রহমান, নিজামউদ্দিন অমিত, শেখ জামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা বেলায়েত হোসেন মোড়ল, শেখ ফরিদ উদ্দিন, নজরুল ইসলাম বাবলু ইফতারে ছিলেন।