নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বিএনপি ভোট জালিয়াতি রোধে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন ও ২০০১ সালে যে সংসদীয় সীমানা ছিল তা পুনর্বহালসহ একাধিক প্রস্তাব দেবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইসির সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসির আমন্ত্রণপত্র পায়নি। আমন্ত্রণপত্র পেলে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে যাবে সংলাপে বসতে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিকে একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হবে। ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলাকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে থাকবেন না। তাই স্থায়ী কমিটির সভায় ইসির সংলাপে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। এর আগে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বসে প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন ইসি দায়িত্বভার গ্রহণ করে। শুরু থেকেই বিএনপি বলে আসছে, নতুন ইসি সরকারের বশংবদ। তারা সরকারের নির্দেশে কাজ করবে। আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে এই ইসি গঠন করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ইতোপূর্বে সাংবাদিকদের বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই তারা কিছু খসড়া প্রস্তাব নিয়েছেন। বিশেষ করে নির্বাচনকে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত রেখে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে সবার মতামত নেওয়া হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যে প্রস্তাবগুলো আসবে তা পর্যালোচনা করে তারা পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপি ইসির কাছে কী কী প্রস্তাব দিতে পারে জানতে চাইলে দলটির থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনকালীন ইসি যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে সে বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সেই নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে। সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকার কারণে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও সর্বশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছিল। এ ছাড়া ভোটের সময় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ইসি যেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিকে ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। ফল প্রকাশে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। ভোটার লিস্ট আগেভাবে সব প্রার্থীর মাঝে বিলি করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান সকালের খবরকে বলেন, বিএনপি চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। জনগণ ভোট দিতে পারলে এবং ইসি সঠিক ফলাফল ঘোষণা করতে পারলে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। এজন্য বিএনপি চায় জালিয়াতি মুক্ত নির্বাচন। ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকলে ভোট চোরেরা তটস্থ থাকবে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামানোর কথা বলেছেন। ইসির সঙ্গে সংলাপে বিএনপি কী কী প্রস্তাব দিতে পারে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সকালের খবরকে বলেন, এখনও ইসির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাইনি। আমন্ত্রণপত্র পেলে দলের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যাবে। তার আগে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব করা হবে তা প্রস্তুত করা হবে। সংসদীয় আসনের সীমানার বিষয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সংসদীয় সীমানা ছিল তা পুনর্বহালের প্রস্তাব দেওয়া হবে। তাছাড়া যেসব জেলায় ইসির নিজস্ব অফিস আছে যেসব জেলায় জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং অফিসার না করে ইসির নিজস্ব অফিসারদের দায়িত্ব দিতে হবে।