নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে নামের তালিকা চেয়েছে, তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করা হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার নামের তালিকা চূড়ান্ত করবেন।
রোববার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নাম চূড়ান্ত না হওয়ায় সোমবার রাত পর্যন্ত তা মুলতবি করা হয়েছে। সার্চ কমিটির চাওয়া ৫টি নামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার রাত সাড়ে ৯টায় দুই ঘণ্টাব্যাপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, সার্চ কমিটিতে নাম দেয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকাল স্থায়ী কমিটির মুলতবি বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছেন, সার্চ কমিটিকে নাম দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে কাদের নাম প্রস্তাব করা হবে সে ব্যাপারে সোমবার রাতে সিদ্ধান্ত হবে।
স্থায়ী কমিটির এই সদস্য জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতেই দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া উপস্থিত নেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন সার্চ কমিটির কাছে ৫ সদস্যের নাম দেয়া উচিত কি না? বেশির ভাগ সদস্য নাম প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেন। তাদের যুক্তি হলো, এটা লোক দেখানো। সরকারের ইচ্ছার বাইরে কিছু হবে না। তবে বেশিরভাগ সদস্যের অভিমত হলো, তারাও জানেন এই নাম প্রস্তাবে তেমন কিছু হবে না। তবে এখানে নাম প্রস্তাব না করলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়বে। সমালোচনা থেকে বাঁচতে হলেও নাম প্রস্তাব করা দরকার। পরে চেয়ারপারস খালেদা জিয়া নাম দেয়ার ব্যাপারে সায় দেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সার্চ কমিটি সোমবার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করতে চায় বিএনপি। এজন্য স্থায়ী কমিটির বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান।
শনিবার সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসা ৩১টি রাজনৈতিক দলের প্রত্যেকের কাছে পাঁচটি করে নাম চাওয়া হয়। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে এই তালিকা জমা দিতে হবে।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসের শুরুতে। এরপর নতুন যে নির্বাচন কমিশন আসছে তাদের অধীনেই হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোর বাইরে থাকা বিএনপির জন্য এই নির্বাচন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নিবন্ধন আইন অনুযায়ী যেহেতু পরপর দুই বার কোনো নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায় সেহেতু এই নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির জন্য কঠিন।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এখন প্রধান দাবি হিসেবে তুলে ধরছে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের কথা। আর এই নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন নেতারা।