কুমিল্লায় জুলেখা বেগম নামের এক প্রসূতির পেটে নবজাতকের মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই প্রসূতির জরায়ু কেটে অপারেশন করা হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। জুলেখা বেগম নামের এক প্রসূতি মা গত এক সপ্তাহ যাবত তার সন্তান ও শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে এখন দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন।
শনিবার সকালে এ খবর জানাজানি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ভিড় জমায়। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দাবি, ওই প্রসূতির জীবন রক্ষার্থেই অপারেশন করে নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন করে বের করা হয়েছে এবং জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগমের (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৭ মার্চ রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন রোববার দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অপারেশন করেন।
এসময় ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রসূতির স্বামী সফিক কাজী জানান, প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও ডাক্তাররা আমার স্ত্রীকে সিজারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরদিন ১৮ মার্চ দুপুরে জুলেখার সিজার করা হয়। এ সময় তার নবজাতক ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং তার স্ত্রীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ওইদিন হাসপাতালের একজন দারোয়ান এসে তার কাছে মৃত নবজাতককে মাটি চাপা দেয়ার জন্য ৫শ’ টাকা চায়। পরে তিনি ৩শ’ টাকা দিলে ওই দারোয়ান মাটিচাপা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার সন্তানের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি মোবাইলে নবজাতকের ছবি তুলে রাখেন। এরপর দারোয়ান হাসপাতালের অদূরে নিয়ে নবজাতককে মাটিচাপা দেয়।
এদিকে শনিবার (২৪ মার্চ) সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় জমায়। দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের অতিরিক্ত ১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রসূতি জুলেখা বেগম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ডাক্তাররা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পরও আমার পেটে সন্তান নড়াচড়া করছিল। আমি সিজারের কথা বললেও তারা (ডাক্তার) রাতে সিজার করেনি। ডাক্তার আমার জরায়ুপথে পেটের ভেতর হাত দিয়ে টানাটানি করে আমার সন্তান নষ্ট করে ফেলেছে।
অপারেশনে অংশ নেয়া হাসপাতালের ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. আয়েশা আফরোজ, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল। কিন্তু শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে চলে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে বের করা হয়েছে।
তারা আরও জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা জরায়ুটি কেটে ফেলি। অপারেশনের আগে এসব বিষয়ে প্রসূতির স্বামীর অনুমতি নেয়া হয়েছে এবং এতে ডাক্তারদের কোনো অবহেলা ছিল না।
প্রসূতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার একটি সেমিনারে অংশ নিতে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মতিউর রহমান সংশ্লিষ্ট চারজন ডাক্তারকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে ডাক্তাররা অপারেশন করে গর্ভের সন্তান দুই খণ্ড করে বের করে আনেন। এ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সঠিক কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।