ইরানের রাজধানী তেহরানে গতকাল প্রায় একই সময় পার্লামেন্ট ভবন ও আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের সবশেষ খবরে বলা হয়েছে, হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছে। আইএস (ইসলামিক স্টেট) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে গতকালের সন্ত্রাসী হামলাকে। বিবিসি, আলজাজিরা, সিএনএন। ইরানের ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মহিলাদের ছদ্মবেশে অস্ত্রধারীরা পার্লামেন্টের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এক পর্যায়ে এদের একজন শরীরে বাঁধা বোমার বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হামলাকারীদের চারজন নিহত হয়েছে এবং প্রায় চার ঘণ্টা পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে নিরাপত্তা বাহিনী বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম। ইলিয়াস হজরতি নামে এক এমপি ইরানি টেলিভিশনকে জানান, অন্তত তিনজন হামলাকারী পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে। তাদের মধ্যে একজনের হাতে পিস্তল, আর বাকি দুজনের হাতে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল ছিল। সেখানে তাদের গুলিতে অন্তত একজন নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হন। তাসমিন নিউজ জানায়, পার্লামেন্টে হামলাকারীরা অন্তত সাতজনকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইরানের বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, গুলি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্টের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সন্ত্রাসীদের অভিযান শুরু হয়। এ সময় পার্লামেন্ট ভবনে তুমুল গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এখানে নিরাপত্তা রক্ষীরা অন্তত একজন হামলাকারীকে আটকে ফেলে। পার্লামেন্টে হামলা শুরুর পরপরই দক্ষিণ তেহরানে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মাজারে বন্দুকধারীরা গুলি চালালে কয়েকজন আহত হন। তেহরানের গভর্নর হোসেইন হাশেমি জানান, আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে আত্মঘাতী বোমার বেল্ট বাঁধা এক হামলাকারী একটি বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই আত্মঘাতী হামলাকারী একজন নারী ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। ফার্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, খোমেনির মাজারে তিন সন্ত্রাসী হামলা করে। দুইজন আক্রমণকারী দর্শনার্থীদের ওপর এবং তৃতীয়জন বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয় বলে জানিয়েছে সেমি অফিসিয়াল এই নিউজ এজেন্সি। এদিকে আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক গতকাল জানায়, তাদের যোদ্ধারা খোমেনির মাজার ও ইরানের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা করেছে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছে ইরান। কিন্তু ইসলামিক স্টেট গতকালের আগে পর্যন্ত ইরানের ভেতর এরকম কোনো সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারেনি। ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করেছে, ইসলামিক স্টেটের মদদে সাম্প্রতিককালে ইরানের ভেতরে কিছু হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেগুলো তারা ভণ্ডুল করে দিতে সক্ষম হয়।