২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব ২০১৬। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে। পাঁচ দিন ব্যাপী এই উৎসব চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে এই উৎসব চলবে রাতব্যাপী।
উৎসবের চতুর্থ দিন যারা মঞ্চ মাতাবেন
দলীয় কত্থক নৃত্য: মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল ‘রেওয়াজ’
তবলা:নীলেশরণ দেব
খেয়াল:জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলায় আজিঙ্কা যোশি
তবলাযুগলবন্দি :পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
কর্ণাটক কণ্ঠসংগীত যুগলবন্দি: রঞ্জনী ও গায়ত্রী
সরোদ: পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। তবলায় পণ্ডিত যোগেশ শামসি
খেয়াল: পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। তবলায় সৌমেন সরকার
শিল্পীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
দলীয় কত্থক নৃত্য :মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল ‘রেওয়াজ’
মুনমুন আহমেদ
মুনমুন আহমেদ বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক। তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আজহার খান ও সৈয়দ আবুল কালামের কাছে। দিল্লির ভারতীয় রামকলা কেন্দ্রে রামমোহন মহারাজ ও রাজকুমার শর্মার কাছে তিনি দীর্ঘদিন তালিম নেন। পরে প্রবাদ প্রতিম পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে তিনি ‘রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৃতিত্বের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে মুনমুন আহমেদ ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে শিশু একাডেমি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে এন এইচ কে জাপান পুরস্কার, ২০০০ সালে ইউনেস্কো কালচারাল অ্যাওয়ার্ড পদক, ২০০১ ও ২০০৩ সালে একতা অ্যাওয়ার্ডসহ নানা সম্মাননা অর্জন করেন।
তবলা : নীলেশরণ দেব
নীলেশরণ দেব
পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের সযত্নে তালিমে নীলেশরণ দেব তবলা বাদনে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। ভারতে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুণী শিল্পীদের সঙ্গে সংগীত সভায় তবলা বাজিয়েছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। এছাড়া নিউ লাইফসহ বিভিন্ন ফিউশন ব্যান্ডেও তিনি বাজিয়েছেন।
খেয়াল : জয়তীর্থ মেউন্ডি। তবলায় আজিঙ্কা যোশি
জয়তীর্থ মেউন্ডি
জয়তীর্থ মেউন্ডি কিরানা ঘরানার একজন কৃতী কণ্ঠ শিল্পী। সংগীতে হাতে খড়ি মায়ের কাছে। পরে পণ্ডিত অর্জুন সানাকোড় ও শ্রীপতি পেদেগারের কাছে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। অনায়াস গায়ন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ তানকারী তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। জয়তীর্থ ইতোমধ্যে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ‘ইয়াংমায়েস্ত্রো ইন মিউজিক’ পুরস্কার গ্রহণ করেন। এছাড়া পণ্ডিত যশরাজ গৌরব পুরস্কার, পণ্ডিত বাসবরাজ রাজগুরু পুরস্কার ও আদিত্য বিরলা সংগীত কলা কিরণ পদকও অর্জন করেন।
তবলা যুগলবন্দি : পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডি শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
যোগেশ শামসি
যোগেশ শামসি তাঁর বাবা প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী পণ্ডিত দিনকার কৈকিনীর কাছেই সংগীতে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি পরবর্তীকালে এইচ তারানাথ রাওয়ের কাছে তালিম নেন। তবে প্রবাদ প্রতিম তবলিয়া ওস্তাদ আল্লা রাখার কাছেই তাঁর প্রতিভার সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটে। শাস্ত্রীয় সংগীতের সব নামিদামি কণ্ঠ ও যন্ত্রশিল্পীর সঙ্গে তিনি তবলায় সংগত করে প্রভূত সুনাম অর্জন করেছেন। সফল বাদক ছাড়াও তিনি একজন পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। পশ্চিমা বিশ্বে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়িকা স্বরূপ তবলা শিক্ষার একটি পাঠ্যক্রম রচনা করেছেন। শামসি গুরুমুখী ঐতিহ্যের ধারক এবং নিজস্ব বাদনশৈলীতে তা বজায় রেখেছেন।
শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশিষ্ট তবলাবাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পণ্ডিত স্বপন শীবের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি অন্যান্য ঘরানার বাদন শৈলীও রপ্ত করেন। তীক্ষ্ণ সাংগীতিক বোধ তাঁর বাদনকে অনন্য করে তুলেছে। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, জনম্যাক্লফ্লিন, ওস্তাদ রশিদ খান, ওস্তাদ আমজাদ আলি খান, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, ড. এলসুব্রহ্মণ্যন, ড. বালমুরালি কৃষ্ণ, পণ্ডিত যশরাজ, এমএস গোপাল কৃষ্ণন, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত ভিজি যোগসহ বহু স্বনামধন্য শিল্পীর সঙ্গে দেশে-বিদেশে তবলা পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন।
কর্ণাটক কণ্ঠ সংগীত যুগলবন্দি : রঞ্জনী ও গায়ত্রী
রঞ্জনি ও গায়ত্রী
রঞ্জনি ও গায়ত্রী বাল সুব্রহ্মণ্যন ভগ্নিদ্বয় প্রতিষ্ঠিত কর্ণাটকি কণ্ঠশিল্পী ও বেহালাবাদক জুটি। অল্প বয়সেই সংগীত শিক্ষা শুরু হয় সম্মুখানন্দ সংগীত বিদ্যালয়ে অধ্যাপকটি.এস. কৃষ্ণস্বামীর কাছে। একক ও যুগল পরিবেশনা উভয়েই তাঁদের মুনশিয়ানার ছাপ রয়েছে। ড. বালমুরালি কৃষ্ণ ও টি বিশ্বনাথনসহ অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্পীর সঙ্গে তাঁরা মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন। রঞ্জনি ও গায়ত্রী তাঁদের পরিবেশনার জন্য বিভিন্ন পদক এবং খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের ত্যাগ ব্রাহ্মগণ সভার বাণী কলা সুধাকর পুরস্কার, ভারতীয় বিদ্যাভবনের আজীবন সম্মাননা, চেন্নাই সাংস্কৃতিক আকাদেমি প্রদত্ত সংগীত কলা শিরোমণি পদক, সংস্কৃতি পুরস্কার, কল্কি কৃষ্ণমূর্তি স্মৃতিপুরস্কার এবং আরো অনেক সম্মাননা তাঁরা অর্জন করেছেন।
সরোদ : পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। তবলায় পণ্ডিত যোগেশ শামসি
তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
স্বনামধন্য সরোদিয়া পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদারের হাতে খড়ি পিতামহ বিভূতি রঞ্জন মজুমদারের কাছে। পরবর্তীকালে বাবা রঞ্জন মজুমদারের কাছে এবং ওস্তাদ বাহাদুর খান, পণ্ডিত অমরেশ চৌধুরী, অনীল পালিত, পণ্ডিত অজয় সিংহ রায়, ওস্তাদ আলি আকবর খান এবং পণ্ডিত রবিশঙ্করের কাছে তিনি তালিম নেন। গভীর সংগীত জ্ঞান ও কৌশলগত দক্ষতা এবং ধ্রুপদ, তন্ত্রকারী ও বিভিন্ন গায়কির উপাদানে সমুজ্জ্বল তাঁর পরিবেশনা। রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক, পণ্ডিত ডিভি পালুস্কার পুরস্কার এবং পশ্চিম বাংলা সরকার প্রদত্ত সংগীত মহা সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। ঢাকার বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের তিনি একজন সম্মানিত গুরু।
খেয়াল: পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। তবলায় সৌমেন সরকার
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী
শৈশব থেকেই অজয় চক্রবর্তীর বিরল সাংগীতিক প্রতিভার বিকাশ ঘটে। হাতেখড়ি পিতা অজিত চক্রবর্তীর কাছে। এরপর পণ্ডিত কানাইদাস বৈরাগী, ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলিখাঁর পুত্র ওস্তাদ মুনব্বর আলিখান এবং পণ্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের মতো প্রবাদ প্রতিম গুরুদের কাছে তালিম নেন। নিবিড় প্রশিক্ষণ ও স্বীয় অধ্যবসায়ের গুণে অজয়চক্রবর্তী পাতিয়ালা-কসুর ঘরানা ছাড়াও অন্যান্য প্রধান ঘরানার বৈশিষ্ট্য রপ্ত করতে সমর্থ হন। আইটিসি-সংগীতরিসার্চ অ্যাকাডেমির শুরু থেকেই তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি সেখানে প্রথম স্কলার হিসেবে যোগদান এবং পরবর্তীকালে সর্বকনিষ্ঠ গুরু হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গুরু ও বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি এখনো আইটিসি-সংগীতরিসার্চ অ্যাকাডেমিতে বহাল আছেন। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর পুরস্কার ও অর্জনের তালিকা দীর্ঘ। পদ্মশ্রী, আইটিসি-এসআরএ স্বর্ণপদক, সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার, ৪৫ অনূর্ধ্ব সেরা সংগীতশিল্পী হিসেবে কুমার গান্ধর্ব পুরস্কার, আল্ভারভিরাসাত পুরস্কার, বঙ্গ বিভূষণসহ অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।