শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
এক-এগারোর সময় নেওয়া ব্যবসায়ীদের ৬১৫ কোটি টাকা অর্থ ফেরত দিতে হবে
প্রকাশ: ১১:১৭ am ১৬-০৩-২০১৭ হালনাগাদ: ১১:৪৭ am ১৬-০৩-২০১৭
 
 
 


সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করা ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।


ফলে ওই অর্থ এখন ব্যবসায়ীদের ফেরত দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
 
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
 
আদালতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করীম। ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
 
এর আগে বুধবার (১৫ মার্চ) এ বিষয়ে শুনানি শেষ হয়।

আহসানুল করীম বাংলানিউজকে জানান, যারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা তাদের অর্থ ফেরত পাবেন। তবে কিভাবে এবং কতোদিনের মধ্যে তারা এ অর্থ ফেরত পাবেন আদালতের বিস্তারিত রায়ে সে বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যাবে। 

ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, এতোগুলো টাকা সরকার কোথা থেকে ফেরত দেবে তা চিন্তার বিষয়। এখন সরকার যদি রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে রিভিউ হবে। 

বিভিন্ন সূত্র মতে, ওই সময়ে ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১২শ’ কোটি টাকার বেশি নেওয়ার খবর প্রকাশ হলেও হাইকোর্টে কেবল ১১টি রিট করা হয়েছে। যারাই রিট করেছেন এখন কেবল তারাই এ সুবিধা পাবেন। ১১ রিটের বিপরীতে মোট অর্থ হলে ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জরুরি অবস্থার সময়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন। এ টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়।
 
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা হয়।
 
পরে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করে টাকা দেওয়া দু’টি প্রতিষ্ঠান।
 
২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তাদের অর্থ তিন মাসের মধ্যে ফেরতের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
 
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপিল করলে তাস্থগিত করেন আপিল বিভাগ।

দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা টাকা আদায় করা হয় ওই সময়। বসুন্ধরা গ্রুপের নামে প্রথমে ৭৭ কোটি টাকা ৯টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২০০৭ সালের ২৮ মে সরকারের হিসাবে জমা পড়ে। এরপর একই বছরের ২৮ অক্টোবর ১০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়। ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল ও ১১ জুন যথাক্রমে আরও ৭৩ কোটি টাকা ও তিন কোটি টাকা নেওয়া হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের নামেও বাংলাদেশ ব্যাংকে তিন কোটি টাকা জমা হয়। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে ছাড়াও একটি গোয়েন্দাসংস্থার কর্মকর্তারা চার দফায় ৪৭ কোটি টাকা জমা নেন।

২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল জেমস ফিনলের কাছ থেকে আদায় করা ১১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার ১৬টি পে-অর্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কনসোলিডেটেড ফান্ডের ওই হিসাব নম্বরে জমা দেওয়া হয়। ২২ এপ্রিল একই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫টি পে-অর্ডারের মাধ্যমেআরও ১২০ কোটি ২৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়।
 
একইভাবে দেড় বছর ধরে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট হিসাবে টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, এবি ব্যাংকের ১৯০ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি টাকা, আমিন মোহাম্মদফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যমুনা গ্রুপের ৩০ কোটিটাকা, এমজিএইচ গ্রুপের ২৪ কোটি টাকা, এলিট পেইন্টের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, কবির স্টিল মিলসের ৭ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩৯ কোটি টাকা, কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের সাত কোটি টাকা, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৮ কোটি টাকা, স্বদেশ প্রপার্টিজের ৯ কোটি টাকা, পিংক সিটির ছয় কোটি ৪১ লাখ টাকা, আশিয়ান সিটিরএক কোটি টাকা,  সাগুফতা হাউজিংয়ের দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা,হোসাফ গ্রুপের ১৫ কোটি টাকা, পারটেক্স গ্রুপের ১৫ কোটি টাকা এবং ইসলাম গ্রুপের কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়।

অন্যদিকে ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর কাছ থেকে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা, ব্যবসায়ী নূর আলীর কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা,ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের কাছ থেকে ১৭ কোটি টাকা, আবুসুফিয়ানের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা, শওকত আলী চৌধুরীর কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যসালিমুল হক কামালের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা, ওয়াকিলআহমেদের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা, তারেক রহমানের বন্ধুগিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কাছ থেকে ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক পারভীন হক সিকদারের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা আদায় করা হয়।
 
এর বাইরে আরও কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্নপরিমাণে অর্থ আদায় করা হয়েছিলো। 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT