বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, “দেশে আর কোনোদিন একদলীয় নির্বাচন হবে না। বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে চলবে।”
শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পিলখানা ট্র্যাজেডি স্মরণে লেবার পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক এ আইনমন্ত্রী বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি হলে নির্বাচন করতে পারবেন না, এটা ঠিক নয়। মিথ্যা মামলায় সাজা হলে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।”
মওদুদ আহমদ বলেন, “ধরে নিলাম, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে গেলো, ভালো কথা। সাজা হয়েছে, আমরা আপিল ফাইট করবো। আপিল হলো, যে বিচার হয়েছে এর ধারাবাহিকতা। তখন আমরা তার জন্য জামিন নেবো।”
তিনি বলেন, “এমন একটা ভাব, উনি যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যান তাহলে তিনি আগামী তিন বছর বা সাত বছর জেলখানায় থাকবেন- এটা হয় না। দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আপিল ফাইট করার পরপরই আমরা জামিনের জন্য দরখাস্ত করবো। সাধারণত তিন বছর সাজা হলে এমনিতেই তো জামিন হয়। আর সাত বছর সাজা হলে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে জামিন নিশ্চিত হবে। খালেদা জিয়া জেলখানা থেকে আবার মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেন। এটাই হলো কথা। কিন্তু এটা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা কথাবার্তা চলবে।”
তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হলেও নির্বাচনে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নয়, বরং তিনি দল এবং জোটের নেতৃত্বও দিতে পারবেন।”
মওদুদ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মাঝেমাঝে বলেন, ‘একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নিবার্চন হবে’। যদি সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হয়, তাহলে আমাদের দলীয় সকল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সকল মামলা যেগুলো ২০০৭-৮ সালে হয়েছিল, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। তাহলে বলবো, দেশে একটি পরিবেশ ফিরে এসেছে। সরকার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য উৎসাহী।”
তিনি বলেন,“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই। আমরা আলাপ আলোচনা, সংলাপ করতে চাই। সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান এ রাজনৈতিক সঙ্কট ও গণতন্ত্রের সঙ্কটের নিরসন চাই। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর বিকল্প থাকবে না। দেশের মানুষই তখন রাস্তায় নামবে, আন্দোলন করবে। এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সেই দাবি আদায় করতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই, থাকবে না।”
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, “একদলীয় নির্বাচন বাংলাদেশে মাটিতে আর হবে না। সুতরাং সেটা যদি কেউ চিন্তা করে থাকে বা সেই ধরনের কোনো পরিকল্পনা থাকে, তাহলে তারা বাস্তব অবস্থা থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন আছেন।”
তিনি বলেন, “আমাদের নির্বাচনের প্রস্ততিও চলবে, আন্দোলনও চলবে। আন্দোলন হচ্ছে সেই গণতান্ত্রিক পরিবশে ফিরিয়ে আনার, যাতে করে সকল শ্রেণির মানুষ নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে। সেই ভোটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা এবং কোন দল কোন রাজনৈতিক জোট দেশে শাসন করবে।”
তিনি আরো বলেন, “খালেদা জিয়া একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রস্ততি নেবেন, অন্যদিকে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোট দেয়ার যে পরিবেশের কথা বলছি তার জন্য কাজ করবেন।”
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।