দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতাকর্মীর উচ্ছৃঙ্খলতা যেন থামছেই না। কিছু নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্থির। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল-বাণিজ্য, এমনকি ছাত্রী হয়রানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ারও অভিযোগ উঠেছে অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। শুধু চলতি মাসেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ১০টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। যার বেশিরভাগই ঘটেছে নিজেদের মধ্যে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেক জায়গায় এই সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ও বহিষ্কারের মতো ঘটনাও ঘটেছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কঠোর হুশিয়ারি থাকলেও ছাত্রলীগ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাও বিরক্ত। গতকাল সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। নিহত খালেদ আহমদ লিটু ওই কলেজের ছাত্র নয়। পুলিশ জানিয়েছে, খালেদ একপক্ষের হয়ে মারামারি করতে এসেছিল। একই দিন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আসন বরাদ্দ এবং ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ক্যাম্পাসে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বরিশালের বানারীপাড়ায় স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি সুমন মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজারের উল্টোপথে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। ওই ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এক নেতা ওই পুলিশ সদস্যকে মারধর করে। গত রোববার জবিতে ছাত্রলীগের টেন্ডার নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ১০ জন। ১৫ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর ওপর হামলা ও হয়রানির অভিযোগে চার ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। ১৪ জুন খুলনার ডুমুরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয় সাতজন। ১৩ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। একই দিন চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। ১৩ জুলাই মঠবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দুই কিশোরকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেয়। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয় ১৫ জন। আহতরা সবাই ছাত্রলীগের। ৮ জুলাই মাগুরায় ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন অমরেশ বসু কলেজের অধ্যক্ষ। ওই সময় কলেজের ক্যাম্পাস ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা জানান, ছাত্রলীগের এ পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও তা নিয়ে কেন্দ্র মাথা ঘামায়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বিলাসিতায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ বিষয়ে গতকাল রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া ছাত্রলীগের কোনো নিজস্ব কোন্দল বা দ্বন্দ্ব নেই। অনেক স্থানে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। সাবেক কমিটির লোকরা কোনো ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো কাজের জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই লাঞ্ছিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ কোনো হামলার ঘটনায় জড়িত বা অপরাধ করে থাকলে তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।