উপাচার্য নির্বাচনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না থাকায় ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সিনেট ভবনের দিকে যায় শিক্ষার্থীরা। এসময় সিনেট ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মী ও শিক্ষকদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
ছবিঃ শামিম আহম্মেদ
সাদা দলের বর্জন আর নীল দল সমর্থিত শিক্ষকদের একটি অংশের আপত্তি, ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের হাতাহাতির মধ্যেই মাত্র অর্ধেক সদস্য নিয়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য মনোনীত তিনজনের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনীত এই উপাচার্য প্যানেলে রয়েছেন-বর্তমান উপাচার্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটেশনাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আজিজ। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ আগস্ট।
ছবিঃ শামিম আহম্মেদ
এর আগেই এই অধিবেশনে নির্বাচিত তিনজনের প্যানেল থেকে একজনকে পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন ঢাবির আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য প্যানেলে মনোনীতদের নাম নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের চেয়ারম্যান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গতকাল বিকেল ৪টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে তিনজনের একটি প্যানেল মনোনয়ন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি এই প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন। মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সিনেটের এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেন। এদিকে সিনেটের বিশেষ অধিবেশন হওয়ার আগেই ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবনের ফটকে জড়ো হয়। তারা ডাকসুর নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। তারা সিনেটের বিশেষ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরের পাশের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় ফটকের ভেতরে অবস্থান করা প্রক্টরিয়ালবডির সদস্য কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের পথরোধ করেন। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে বসে পড়লে শিক্ষকরা তাদের ধাওয়া দিয়ে বের করে দেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর শিক্ষকরা সিনেট ভবনের ভেতরে চলে গেলে শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবন চত্বরে মানববন্ধন করে। এ সময় তারা, ‘ডাকসু নির্বাচন চাই’, ‘সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি কোথায়?’, ‘আগে ডাকসু পরে ভিসি’, ‘ছাত্র প্রতিনিধিবিহীন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন মানি না’, অবৈধ সিনেটের সিদ্ধান্ত মানি না’ প্রভৃতি স্লোগান লেখা ফেস্টুন শিক্ষার্থীরা বহন করে। শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক এম আমজাদ আলী সাংবাদিকদেও জানান, সিনেট ভবনে বিশেষ অতিথিরা রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সিনেটের ১০৫টি পদের মধ্যে ৫০টি শূন্য থাকায় এবং রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের আগেই সিনেট অধিবেশন আহ্বান করায় এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করতে ঢাবির সিনেটের বিশেষ অধিবেশনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। কিন্তু তার দু’দিন পর ওই রায় ৩০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
ছবিঃ শামিম আহম্মেদ
এছাড়া গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে সিনেটের এই বিশেষ সভা বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষকরা। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের একটি অংশ এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন ছাড়া উপাচার্য নিয়োগকে অযৌক্তিক দাবি করে শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীরা বলে, প্রায় তিন দশক ধরে ডাকসু না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়াই পরিচালিত হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অস্তিত্বকে স্বীকার না করার শামিল।