নওগাঁর মান্দায় র্যাবের হেফাজতে থাকাকালীন মাজহারুল ইসলাম জিয়াস (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তাদের অভিযোগ, জিয়াসকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার ফলে তার মৃত্যু হয়। তবে র্যাব এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, জিয়াস একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। গুলিসহ আটক করে নিয়ে আসার পথে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জিয়াস নওগাঁর মান্দা উপজেলার কৈবর্ত্যপাড়া গ্রামের আনিসুর রহমান মণ্ডলের ছেলে। জিয়াসের পরিবারের সদস্যরা জানান, আটকের পর তাদের সামনেই র্যাব তাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এরপর পেটাতে পেটাতে র্যাব তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। গতকাল সকালে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন জিয়াস রামেক হাসপাতালে মারা গেছে।
র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মুরাদুল ইসলাম জানান, জিয়াসকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬ রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়। এর মধ্যে তিন রাউন্ড বন্দুকের এবং তিন রাউন্ড ছিল পিস্তলের গুলি। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াস জানায়, তার হেফাজতে আরও ৩টি অস্ত্র আছে। জিয়াসের কথামতো সেই অস্ত্র উদ্ধারে তাকে নিয়ে অভিযানে নামে র্যাব। কিন্তু সে অস্ত্রের সন্ধান না দিয়ে বিভিন্ন স্থানে র্যাবকে ঘোরাতে থাকে। একপর্যায়ে জিয়াস গাড়ির মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে দ্রুত রামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে জিয়াসের ভাই আজাহারুল ইসলামের দাবি, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মান্দা উপজেলার পচার মোড় থেকে সাদা পোশাকে গিয়ে র্যাব সদস্যরা জিয়াসকে আটক করে। এরপর র্যাব তাকে নিয়ে বাড়িতে আসে। বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ঘরে আটকে রেখে জিয়াসকে মারধর করে তারা। এরপর তাকে নিয়ে র্যাব বাইরে যায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবার জিয়াসকে নিয়ে বাড়িতে আসে। এ সময় গ্রামের দুজন লোককে ডেকে নিয়ে র্যাব সদস্যরা জানায়, জিয়াসের কাছে ৬ রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে। এরপর জিয়াসকে নিয়ে চলে যায় র্যাব সদস্যরা। রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই জিয়াসের মৃত্যু হয়েছে। তবে তার শরীরে কোনো গুলি বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে জানান চিকিত্সক আসাদুজ্জামান। অন্যদিকে গতকাল দুপুরে রামেক হাসপাতালের লাশঘরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা সুলতানা নুসরার উপস্থিতিতে জিয়াসের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ সদস্যরা। ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা সুলতানা নুসরা বলেন, মৃতের শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে সেই আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে কি না তা ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।