নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অনেকে সুষ্ঠু বললেও খালেদা জিয়া বলছেন, বাইরে থেকেই নির্বাচন সুষ্ঠু দেখা গেছে, ভিতরে চলেছে নানা ষড়যন্ত্র।
গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পৌনে এক লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয়ের জন্য আইভীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে বড় করে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে এই ভোট নিয়ে খালেদা জিয়া বলছেন, “বাইরে হলো সব ফিটফাট, ভেতরে হলো কী? বুঝতে পারছেন যে, ভেতরে যত রকমের দুনিয়ার ষড়যন্ত্র আর বাইরে থেকে সব ফিটফাট দেখায়। এটা বাংলাদেশের মানুষ, যে কোনো ধর্মের মানুষই এতো বোকা নয়, আজকাল ছোট বাচ্চারাও এগুলো বোঝে।”
ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচনও এ রকম অবাধ, নিরপেক্ষ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ভোটে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “এবার এটা দিয়ে তিনারা খুব বাহাদুরি নিতে চাইছেন যে, আমাদের আমলে নিরপেক্ষ একটা ফেয়ার ইলেকশন হয়েছে। কিন্তু ফেয়ার হয়নি। ভোটের পারসেন্টটেজ— ইয়ে টিয়ে…, বুঝা যায় সব কিছু।”
নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু একটা স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- তা কোনো কথা নয়। তার জন্য প্রয়োজন ভোটকালীন সময়ে তিন মাসের জন্য একটা নির্বাচন সহায়ক সরকার, যেটাকে আমরা বলছি নিরপেক্ষ সরকার। সেই সরকার যদি হয়, সেখানে কারচুপি করার সুযোগ থাকবে না বা কাউকে ব্যবহার করার কোনো সুযোগ থাকবে না। ওই রকম একটা সরকার হলে নির্বাচনটা ফেয়ার হতে পারে।”
‘বড়দিন' উপলক্ষে রাতে গুলশানের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। শিশুদের নিয়ে বড়দিনের কেক কাটেন তিনি।
‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, “যেন-তেন নির্বাচন কমিশন হলে এদেশে গণতন্ত্র আসবে না। কেমন নির্বাচন কমিশন হওয়া উচিৎ তার একটা রূপরেখা আমরা দিয়েছি। সেখানে কিন্তু আমি কী সুবিধা পাব, সেটা ওখানে লেখা নেই। সেটা সকলের জন্য সমানভাবে, নিরপেক্ষভাবে করা হয় নির্বাচন কমিশনের রূপরেখাটা।
“আমরা বলেছি, এটা নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে। এখানে যদি আরও কেউ ভালো কিছু দিতে পারে, সেটা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আবার আমাদের কিছু যদি ভালো না লাগে তা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সকলকে নিয়ে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন নিয়ে সমাধানে আসতে হবে।”
সরকার প্রধানসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ওরা মুখে বলছে, আপনারা ওদের খুব ভালো করে চেনেন- আওয়ামী লীগ। মুখে মুখে এখন বড় বড় কথা বলছে মানুষের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য- জ্বি হ্যাঁ, রাষ্ট্রপতি যা করবেন, সেটা আমরা মেনে নেব।
“কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে যে ওরা কানে কানে কী বলবেন, রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে যে কী করাবেন – সেটা কি আমরা বুঝি না? সেজন্য এখন বলছেন, রাষ্ট্রপতি যা করবেন, সেটা আমরা মেনে নেব। এটাই তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য।”
বর্তমানে দেশ থেকে ‘গণতন্ত্র নির্বাসিত’ অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, “দেশে বিচার নেই।বিরোধী দলের জন্য এক রকম বিচার, আর আওয়ামী লীগের জন্য অন্য রকম। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়, জেলে বন্দি করে রাখা হয়।
“এরকম অবস্থা চলতে পারে না। সকলকে আজ ঐকবদ্ধ হতে হবে। অবশ্যই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।”
দেশে এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ নিরাপদ নয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গাইবান্ধায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেত্রী।
তিনি বলেন, “সাঁওতালদের মতো গরীব মানুষদের বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়া হল। এটা কারা করেছে? পুলিশ করেছে। কোনো বিচার আছে?
“কোনো ঘটনা ঘটলে বিএনপি-জামায়াত, নইলে অমুক দল, নইলে তমুক দল, নইলে সন্ত্রাসী। এখন আমরা বলতে চাই যে, এই দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত। এরা সন্ত্রাস করছে, এরাই জঙ্গিবাদ করছে। তাদের ধরলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বন্ধ হবে।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গাড়িতে আগুন, পেট্রোল বোমায় হতাহতের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দায়ী বলেও দাবি করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, “আমি ওই সময়ে তিন মাস গুলশানের অফিসে বন্দি অবস্থায়। পুলিশ গেইটে তালা মেরে রেখেছে। বালুর ট্রাক দিয়ে সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল। সরকার বলছে, আমি নাকি ওই সময়ে মিরপুরে গিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়েছি। মামলা হয়েছে।
“আমিকি এতোই শক্তিশালী হয়ে গেছি? জ্বীন-ভূতের আছর আছে, এতোই শক্তিশালী! এই আগুন তো দিয়েছে পুলিশ। যত আগুন ও পেট্রোল বোমা আওয়ামী লীগ মেরেছে। আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য, বিএনপির ইমেজ মানুষের কাছে নষ্ট করার জন্য এসব কাজ আওয়ামী লীগ করেছে।”
বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যালবার্ট পি কস্টার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জন গোমেজ, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মার্শেল এম চিরান, সুব্রত উইলিয়াম রোজারিও, মাইকেল বি মালো, শশধর দ্রং, নির্ভয় দাস, ডিউক পি রোজারিও, দিপালী রংদি বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খানও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।