বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ২৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
প্রকাশ: ০৯:২২ am ০৩-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:২৪ am ০৩-০৭-২০১৭
 
 
 


পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ২৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। উভয় জেলায় বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে অনেক মানুষ। অন্যদিকে তিস্তাপারের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কিছু গ্রাম ও তীরবর্তী চরগুলো এখনও পানির নিচে রয়েছে। তিস্তার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় বেশ কিছু গ্রামে এখনও ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তিস্তার ভাটিতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পানির তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা ও সুরমার পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। সিলেট অফিস জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতির ফলে সিলেটে ছয়টি উপজেলার ১৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডাকা জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে জেলার জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে পানি উঠে যাওয়ায় এসব এলাকার ১৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৩টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয় থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রীও ইতিমধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৮৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বড়লেখা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ১২টি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। হাকালুকি হাওরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া করা সম্ভব হচ্ছে না। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রোজার ছুটির পর গত শনিবারই ছিল স্কুল খোলার প্রথম দিন। কিন্তু বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের স্কুলগুলোতে পানি উঠায় শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এসব স্কুলের চারপাশ পানিতে ডুবে আছে। এতে ছাত্র-শিক্ষক সবার পক্ষে স্কুলে আসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উপজেলার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়, কানসাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, টেকা আলী উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়, মাইজগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, ইটাউরি হাজী ইউনুছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিম বর্নি উচ্চ বিদ্যালয়, বর্নি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, পাকসাইল উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী শামছুল হক উচ্চ বিদ্যালয় ও সিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয়-এই ১২টি স্কুল বন্যাক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাকালুকি ও সিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। অন্যদিকে ৬ জুলাই থেকে বড়লেখা উপজেলা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধ-বার্ষিক ও প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। বন্যার কারণে ৬ জুলাইয়ের বাংলা পরীক্ষা পিছিয়ে ২৩ জুলাই এবং ৮ জুলাইয়ের ইংরেজি পরীক্ষার তারিখ ২৪ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছে। বড়লেখা উপজেলার ৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টির ক্লাসরুমে পানি ঢুকে পড়েছে। ১৫টি বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি এবং ৭টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলার হাকালুকি সংলগ্ন বর্নি ইউনিয়নের ১৬টির মধ্যে ১৬টিতেই পানি ঢুকেছে। তালিমপুর ইউনিয়নের ১৫টির মধ্যে ১৪টিই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সুজানগর ইউনিয়নের ১৩টির মধ্যে ১৩টিই পানিবন্দি। এ ছাড়া দাসেরবাজার, নিজবাহাদুরপুর, উত্তর শাহবাজপুর ও দক্ষিণ ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বড়লেখা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ বলেন, এ পর্যন্ত ৫৩টির শ্রেণিকক্ষে পানি, ১৫টির চারদিকে পানি ও ৭টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী ও ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি চরগ্রাম সামান্য প্লাবিত হয়। তবে দুপুরের দিকে নদীর পানি কমতে শুরু করায় ওই সব চরগ্রামের পানিও নামতে শুরু করে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘রোববার সকালে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়নসহ নদীর তীরবর্তী ইউনিয়নের বেশ কিছু চরাঞ্চল সামান্য প্লাবিত হয়। তবে দুপুরের পর থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করায় এখন এসব গ্রাম থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। বর্তমানে এসব গ্রাম স্বাভাবিক রয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব ক’টি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। বর্তমানে নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।’ লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটে তিস্তা-ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকা ও তার আশপাশের অন্তত ১০ হাজার পরিবার গত তিন দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।    অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। পানিবন্দি মানুষ দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে মোগলহাট, সানিয়াজান, গড্ডিমারী, মধ্য গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ি, চর ভোটমারি, গোবর্ধন, বালাপাড়া, কালমাটি, কুলাঘাট, রাজপুর ও গোকুণ্ডা ইউনিয়ন। তিস্তা ও ধরলার প্রবল স্রোতে নদীসংলগ্ন লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।     গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীতে আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। কাপাসিয়া, হরিপুর, বেলকা ও শ্রীপুর ইউনিয়নের ভাঙন পরিস্থিতি তীব্র হয়ে উঠেছে। এসব এলাকায় আবাদি জমিগুলো নদীতে বিলীন হওয়ার পর এখন অসংখ্য ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ওই চারটি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার শত শত ঘরবাড়ি তিস্তার ভাঙনের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এই চারটি ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় গত দু’দিন ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। কোনো ঘরবাড়ি এখনও নদীগর্ভে বিলীন না হলেও প্রায় দুইশ’ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। শ্রীপুর ইউনিয়নের বাবুবাজারে ভাঙনের মুখে পড়েছে ১০০ পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে এই পরিবারগুলো ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT