চীনের কনসোর্টিয়াম হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের হাতে ২ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, শেভরন করপোরেশন বাংলাদেশে তাদের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে হিমালয় এনার্জির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে।
তবে কত টাকায় এই ব্যবসা হাতবদল হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
পেট্রোবাংলার সঙ্গে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে তিনটি ব্লকে বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে আসছে শেভরন।
তাদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ওই তিন ক্ষেত্রে থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়, যা বাংলাদেশের প্রতিদিনের গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৫৫ শতাংশ।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানি এবং বিদেশি কোম্পানি তাল্লো ২৩টি ক্ষেত্রে থেকে বাকি ৪৫ শতাংশ গ্যাসের যোগান দেয়।
গ্যাস ছাড়াও তিনটি ক্ষেত্র থেকে উপজাত হিসেবে প্রতিদিন তিন হাজার ব্যারেল তরল হাইড্রোকার্বন উৎপাদন করে আসছে শেভরন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই তিন গ্যাসক্ষেত্রের সম্পদমূল্য প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। শেভরনের সঙ্গে হিমালয়ের চুক্তি চূড়ান্ত হলে এটাই হবে বাংলাদেশে চীনের প্রথম বড় কোনো বিনিয়োগ।
গত দুই বছরে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান সামাল দিতে শেভরন বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে খবর আসছিল সংবাদমাধ্যমে।
এর মধ্যে গত বছর অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই কোম্পানি জানায়, ২০১৭ সালে প্রায় হাজার কোটি ডলারের সম্পদ তারা বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সের বেশ কয়েকটি প্রকল্প থাকছে।
রয়টার্স গত ফেব্রুয়ারিতে এক প্রতিবেদনে জানায়, চায়না ঝেনহুয়া অয়েল বাংলাদেশে শেভরনের গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিতে প্রাথমিক চুক্তি করেছে।
এই ঝেনহুয়া অয়েল এবং ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম সিএনআইসি করপোরেশনের কনসোর্টিয়ামই হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড।
চায়না নিংবো ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন কোম্পানি লিমিডেট- সিএনআইসি একটি রাষ্ট্রয়াত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে, হংকংয়ে। মূলত বিদেশে চীনা বিনিয়োগের বিষয়টি দেখাই এ কোম্পোনির কাজ।
ঝেনহুয়া অয়েলের একজন মুখপাত্রের করাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, শেভরনের সঙ্গে হিমালয় এনার্জির চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে তাদের চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে হবে।
এদিকে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স লিখেছে, শেভরনের সম্পদ কিনে নেওয়া বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে কি না, তা এখনও যাচাই করে দেখছে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি।
“পরামর্শকের প্রতিবেদন হাতে আসার আগে আমরা তো তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমরা আশা করব, আমাদের অনুরোধ শেভরন রাখবে,” বলেন নসরুল হামিদ।
শেভরণ গত বছর তাদের সম্পদ বিক্রির প্রাথমিক ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তা কিনে নেওয়ার আগ্রহ দেখায় এবং মার্চে উড ম্যাকেঞ্জিকে পরামর্শক নিয়োগ করে।