মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
বাজেট বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন হবে-অর্থমন্ত্রী
প্রকাশ: ০৯:৩৯ am ১৭-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৪০ am ১৭-০৭-২০১৭
 
 
 


চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটকে আবারও জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে এই বাজেট বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন হবে। এমনকি আগেভাগে বাজেটে বড় ধরনের সংশোধন প্রয়োজন হতে পারে বলে স্বীকার করেন তিনি। আর সঞ্চয়পত্রের সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা, তারা যাতে পান সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া দল চাইলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী। গত শনিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত আলাপে অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে এ কথা বলেন। এ সময় সিনিয়র অর্থ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুছুর রহমান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। কারণ বড় ধরনের কিছু আয়ের উত্স বাদ দেওয়া হলেও বাজেটের আকার পরিবর্তন করা হয়নি। তবে চিন্তা করছি কী করা যায়। প্রতিবারের মতো এবারও বাজেট সংশোধন করতে হবে। সংশোধিত বাজেট আগেই দেওয়া হবে, দিতেই হবে। যেহেতু নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে কারণে বাজেটের অনেক ফিগার পরিবর্তন করতে হবে। সে কারণেই এবার বাজেটের বড় সংশোধন করতে হবে এবং সেটা বেশ আগেই করা হবে। জাতীয় সংসদেই এই সংশোধন আনা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। প্রত্যেকবারই যে বাজেট পেশ হয়, সেটা পাস হয় না উল্লেখ করে মুহিত বলেন-যেটি পাস হয়, সেটি পরিবর্তনের মাধ্যমে হয়। এবার ভ্যাট অ্যাক্ট স্থগিত রাখা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ কারণে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটু কঠিন হবে, তবে অসম্ভব হবে না। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্বের উত্স কিছুটা পরিবর্তন করা হবে বলে জানান তিনি। আইএমএফের পরামর্শে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। আইনটির বাস্তবায়নে বারবার পিছিয়ে দেওয়ায় সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, শুধু আইএমএফ নয়, সব দাতা প্রতিষ্ঠানসহ সারা দুনিয়াকে বলেছি, গত বাজেটেও বলেছি, ২০১৭ সালে ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। কিন্তু সেটা করতে পারিনি। তবে এ কারণে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তা ছাড়া আইএমএফ এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিশ্বব্যাংক কিছু দিয়েছে। তারাও (আইএমএফ) হয়তো দেবে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি যেভাবেই হোক ব্যবস্থা করতে হবে। সে বিষয়ে মুহিত বলেন, বাজেটে আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এখন রাজস্ব আদায়ের প্রধান উত্স হবে এই আয়কর ও করপোরেট কর। তৈরি পোশাক খাতে উেস কর বিদ্যমান শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হারেই বহাল থাকছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের দাম কমে গেছে। রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে উেস কর আগেরটিই রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনবিআর এ বিষয়ে এসআরও জারি করেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, ২৮ জুন বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতে উেস কর ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ক কমিটির বৈঠক হবে। সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না যাতে পেনশনারভোগী ও মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সঞ্চয়পত্রের সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা তারা যাতে পান, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সব সময়ই মার্কেট রেটের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার একটু বেশি থাকে। এখনও সেটাই থাকবে। তবে সঞ্চয়পত্রের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমা থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। প্রসঙ্গত, গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। এ বাজেটে আয়ের অন্যতম উত্স ছিল ভ্যাট। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নকে সামনে রেখে ভ্যাট খাতে সর্বোচ্চ ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হলেও সদ্য পাস হওয়া বাজেটে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো ধরনের কাটছাঁট করা হয়নি। এ খাত থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কমে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ করে তা ব্যয় করাই হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার আগে থেকেই অর্থমন্ত্রী বলে আসছিলেন, এ বাজেট হবে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট। বাজেট ঘোষণার পরও মন্ত্রী এই দাবি করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, বয়স হয়েছে; আর নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। তবে যদি আমার পার্টি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে বিবেচনা করব। তখন নির্বাচন করতে পারি।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT