একাত্তরে বাংলাদেশে দমন-পীড়নের বিরোধিতায় কলম ধরায় বিদেশি বন্ধু হিসেবে যে সম্মাননা পেয়েছিলেন ওয়ারিস মীর, তা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তার ছেলে পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, বাবার ওই সম্মাননাকে এখন তার ‘ধোঁকা’ বলে মনে হচ্ছে।
“উনি চাচ্ছেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক একদম শেষ হয়ে যাক। ওই অ্যাওয়ার্ড ছিল ধোঁকা। আমি ধন্যবাদের সাথে বলছি, ওই অ্যাওয়ার্ড আমাদের হাসিনা ওয়াজেদকে ফেরত দেওয়া উচিত। আমি এই ধোঁকা ফেরত দিচ্ছি।”
স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো যে ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সম্মাননা দেওয়া হয়, তার মধ্যে ওয়ারিস মীরসহ ১৩ জন ছিলেন পাকিস্তানি।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার ভয়াবহতা সচক্ষে দেখতে একদল ছাত্র নিয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর।
নির্মমতার চিত্র দেখে ক্ষুব্ধ এই সাংবাদিক তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন দৈনিক জং পত্রিকায়।
শত্রু দেশের এইসব বন্ধু এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে ২০১৩ সালে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাকিস্তানের জিও নিউজের শো হোস্ট হামিদ মীর বাবার পক্ষে সেই সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন সে সময়।
বৃহস্পতিবার জিও নিউজের নিয়মিত শো ‘ক্যাপিটাল টকে’ হামিদ বলেন, “... মুসলিম লীগ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত। ২০১৩ সালে আমাদের বলা হয়েছিল পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো করার জন্য পাকিস্তানের কিছু মুরুব্বিকে বাংলাদেশ সরকার অ্যাওয়ার্ড দেবে। যার মধ্যে আমার বাবাও ছিলেন। ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক অপারেশনের বিরোধিতা করেছিলেন তাদের এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।”
হামিদ মীরের ভাষ্য, সে সময় ১৩ জন পাকিস্তানি ওই ‘দাওয়াত’ গ্রহণ করেছিলেন এ কারণে যে, শেখ হাসিনা পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নতি করবেন।“আমি সেখানে গিয়ে বাবার পক্ষে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এরপরে দেখলাম, হাসিনা ওয়াজেদ সম্পর্ক ভালো করার জায়গায় আরও খারাপ করলেন। এমন মনে হচ্ছে যে, তিনি পাকিস্তানিদের যে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিলেন সেটা ধোঁকা ছিল।”
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য পাকিস্তান সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে ২০১৩ সালের মার্চে বাবার সম্মাননা নিতে ঢাকায় এসেছিলেন হামিদ মীর।
সে সময় বাংলাদেশের সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানেও একদিন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বিচারের পর তাদের সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের মধ্যে কূটনৈতিক রীতি ভেঙে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং দেশটির পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের পর গতবছর নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়।
এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ গতবছর শেষ দিকে ইসলামাবাদ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনও করে।
পাকিস্তানের ওই প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদে দেশটির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে সে সময়। কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করারও দাবি তোলে বিভিন্ন সংগঠন।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পর্ক ছিন্নের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে “কূটনৈতিক সম্পর্কও চলবে, ঝগড়াঝাটিও চলবে।”