বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে লরি নিয়ে হামলাকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইতালির মিলান শহরের কাছে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো মিন্নিতি বলেন, আজ ভোরের দিকে সেসতো সান জিওভান্নি এলাকায় নিয়মিত টহলের সময় পুলিশ এক ব্যক্তির কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে সে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।
“ওই ব্যক্তিই যে আনিস আমরি তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।”
পরে অন্য এক সংবাদ সম্মেলনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী পাওলো জেনতিলোনি বলেন, তিনি ফোনে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলকে আনিস আমরির নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মেরকেলের মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা রোম থেকে লিখিত বক্তব্যের অপক্ষায় আছেন।
ইতালির সংবাদ সংস্থা এএনএসএ-র খবরে বলা হয়, আমরি ট্রেনে ফ্রান্স থেকে তুরিন যায়। সেখান থেকে অন্য একটি ট্রেনে মিলানের পথে রওয়ানা হয়।
ইতালির মিলানের সেসতো সান জিওভান্নি এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত বার্লিন হামলার সন্দেহভাজন আনিস আমরি সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র রাস্তায় পড়ে আছে।
ইতালির মিলানের সেসতো সান জিওভান্নি এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত বার্লিন হামলার সন্দেহভাজন আনিস আমরির মৃতদেহ ঢেকে রাখা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
মিলানের সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে সে সেসতো সান জিওভান্নি যায়। পুলিশ যখন পরিচয়পত্রের জন্য তাকে থামায় তখন সে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল।
পুলিশ তাকে থামালে সে তার ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে এবং পুলিশকে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইতালির প্যানোরামা ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, যখন গোলাগুলি হয় তখনও ভোরের আলো ফোটানি। অন্ধকারের মধ্যে একটি এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
ইটালির সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে নিহত ওই ব্যক্তির আঙুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজন হামলাকারী তিউনিসীয় আনিস আমরির আঙুলের ছাপ মিলে গেছে।
লরির ভেতর থেকে আনিস আমরির আঙুলের চাপ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জার্মান পুলিশ।
গত সোমবার রাতে বার্লিনের প্রাণকেন্দ্র ব্রাইটশেইডপ্লাৎজে বড়দিন সামনে রেখে বসা একটি বাজারে ভিড়ের উপর ইস্পাত বহনকারী একটি লরি উঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ভিড় মাড়িয়েই লরি নিয়ে চালক প্রায় ৫০ থেকে ৮০ মিটার এগিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৪৯ জন আহত হয়।
পরে পুলিশ হামলায় ব্যবহৃত লরির চালকের আসনের নিচে আনিস এ নামে ২৪ বছর বয়সী তিউনিসীয় এক শরণার্থীর অস্থায়ী পারমিট খুঁজে পায়।
লরির ভিতরে একটি মৃতদেহও পাওয়া যায়, গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিই লরির আসল চালক ছিলেন।
জার্মান পুলিশ এ ঘটনাকে একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বিবেচনা করে তদন্তে অগ্রসর হয়। জার্মান ফেডারেল প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে আমরির বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য এক লাখ ইউরো পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।
তদন্তে জানা যায়, আনিস এ (আনিস আমরি)সাত বছর আগে শরণার্থী হিসেবে তিউনিসিয়া ত্যাগ করে। প্রায় চার বছর সে ইতালিতে ছিল এবং যার বেশির ভাগ সময়ই সে কারাগারে থাকার পর এ বছর শুরুর দিকে সে জার্মানি প্রবেশ করে এবং আশ্রয়ের আবেদন করে।
কিন্তু তার ওই আবেদন বাতিল হয়ে যায় এবং জুনে তাকে জার্মানি থেকে বিতাড়িত করার কথা ছিল। কিন্তু তিউনিসিয়া সরকার প্রথমে আমরিকে তাদের নাগরিক নয় বলে জানায়। পরে জার্মান কর্তৃপক্ষ তার জন্য নতুন করে পরিচয় সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি শুরু করে।
এ বছরের শুরুর দিকে ডাকাতির পরিকল্পনা করছেন সন্দেহে পুলিশ আমরির উপর নজর রেখেছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে নজরদারি বন্ধ করা হয়।
আমরি কয়েকটি ছদ্ম নাম ব্যবহার করেছিলেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।বার্লিন হামলার পর আমরির খোঁজে ডর্টমুন্ড শহরের দুইটি অ্যাপার্টমেন্টে বৃহস্পতিবার ভোরে অভিযান চালিয়েছিল জার্মান পুলিশ।
তার বিরুদ্ধে ইউরোপ জুড়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
শুক্রবার ডেনমার্কের পুলিশ টুইটারে জানায়, আমরির মত দেখতে এক ব্যক্তিকে উত্তরের শহর আলবর্গে দেখা গেছে।
যদিও জার্মানির তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়, আমরি এখনও বার্লিনেই কোথাও লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
কারণ তাদের ধারণা, লরি চালকের সঙ্গে হাতাহাতির সময় সে আহত হয়েছে এবং এখনই কারও নজরে আসতে চাইছে না।