আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে আজ সকাল ১১টায়। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি চালুসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ।
এর আগে গত রোববার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। বিএনপি ইসির কাছে যে ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে এর মধ্যে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের প্রস্তাবও রয়েছে। এ ছাড়া ভোটের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের আগের সংসদীয় আসন সীমানা ফিরিয়ে আনা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু না করার প্রস্তাবও দিয়েছে বিএনপি।
সেই হিসেবে আজ বিএনপির পাল্টা প্রস্তাব নিয়েই সংলাপে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে দলের ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ গ্রহণ করবে।
ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, মশিউর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, মোহাম্মদ জমির, মো. রশিদুল আলম, মাহাবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এইচ এন আশিকুর রহমান, হাছান মাহমুদ, আব্দুস সোবহান গোলাপ ও রিয়াজুল কবির কাওছার প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ইসিতে যাবেন।
বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, ইভিএম ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনায় সেনা মোতায়েন না করা, আরপিওতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না আনা, একান্ত জরুরি না হলে সীমানা পুনর্বিন্যাস না করা, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিসহ তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, ভোটার তালিকার ভুলগুলো দূর করার বিষয় বৈঠকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তবে সেনাবাহিনী নিয়ে দলটির বক্তব্য থাকবে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন সম্পূর্ণ ইসির এখতিয়ার। ইসি প্রয়োজন মনে করলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন করতে পারে। তবে আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষাবাহিনীকে সংযুক্ত করার প্রয়োজন নেই।
সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এই সরকারই নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এই সরকার রুটিন কাজগুলো করবে। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন।
‘আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। সংবিধানের বাইরে যাওয়া মানেই হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিএনপি এটা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করছে’, যোগ করেন নাসিম।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সরাসরি অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই। তারা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকতে পারে। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেই জন্যও দলের পক্ষ থেকে আরো কিছু প্রস্তাবনা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরা হবে বলেও জানান তিনি। ই-ভোটিং নিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে একটি ডিজিটাল নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করতে। এরই একটি অংশ হচ্ছে নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরোপুরি ইভিএম চালু করতে না পারলেও অন্তত কিছু কিছু কেন্দ্রে এর ব্যবহার এবং স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব। কমিশনের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ৩১ জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধি সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। এরপর ২৪ আগস্ট থেকে কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।