ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণে বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিসহ পানি সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। এ নিয়ে দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ে অনেকবার আলোচনাও হয়েছে এবং মমতাকে অনুরোধ করার পরও তিনি তার অবস্থানে অনড়। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টো বাংলাদেশের কাছে আত্রাই নদীর পানি চাইছেন। তিনি বলছেন, বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাটিতে (পশ্চিমবঙ্গে) পানিপ্রবাহ কমে গেছে। পানিপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা আগে থেকেই বলে আসছেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সার কারখানার দূষণে পশ্চিমবঙ্গের মাথাভাঙ্গা ও চূর্ণি নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে নোট ভারবাল দিয়েছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। গত ৫ জুন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই নোট ভারবাল দেওয়া হয়। গত মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে তিনি বাংলাদেশের এই দুটি বিষয়ে অভিযোগ করেন এবং চিঠিও দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশকে দুটি চিঠি দিয়েছে। পররাষ্ট্র ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা বাংলাদেশকে পানি না দিয়ে এখন উল্টো সুর ধরেছেন। এটা তার একটা নতুন কৌশল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে তিনি এই কৌশল অবলম্বন করছেন। কারণ আত্রাই নদীতে ড্যাম দিয়ে যে পানি সেচকাজে লাগানো হয় তাতে শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ তেমন কমে না। কারণ ড্যাম দিয়ে পানি অন্য কোনো নদীতে সরিয়ে নেওয়া হয় না, পানিপ্রবাহ ভালোই থাকে। কিন্তু ভারত তিস্তাসহ অনেক অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভারত আত্রাই নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার যে অভিযোগ করেছে তা ঠিক নয়। ড্যাম থাকলেও পানি নদীতেই থাকে। পানি অন্য কোনো নদীতে সরিয়ে নেওয়া হয় না। ভারতের অভিযোগের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ছাড়া মাথাভাঙ্গা-চূর্ণি নীদতে সার কারখানার দূষণের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত এপ্রিল মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সই না করার ঘোষণা দেওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে পানি না দিয়ে এখন উল্টো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পানি না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এটা তার একটা কৌশল। এ দুটি বিষয় নিয়ে গত মে মাসে যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি পর্যায়ের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। ভারতের চিঠিতে আত্রাই নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ করায় ভাটিতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে একটি যৌথ প্রতিনিধি দল প্রেরণের মাধ্যমে এর সমাধানের কথা বলা হয়েছে। পানিপ্রবাহে কোনো প্রতিবন্ধকতা না রাখার বিষয়েও চিঠিতে বলা হয়েছে। আত্রাই নদী পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে উত্পত্তি হয়ে পঞ্চগড়ে প্রবেশ করে দিনাজপুর হয়ে আবার পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রবেশ করেছে। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ২৬৯ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশের দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার। পৃথক আরেক চিঠিতে বাংলাদেশের মাথাভাঙ্গা নদীর (পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় যার নাম চূর্ণি) পানিদূষণের বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চূর্ণির পানি পরীক্ষা করার বিষয়টি উল্লেখ করে দ্রুত এর সমাধান করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ও পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল গতকাল সকালের খবরকে বলেন, আত্রাই নদীতে রাবার ড্যাম পরিদর্শনে ভারত যৌথ পরিদর্শক দল পাঠানোর কথা বলছে। কিন্তু ভারত যে অনেক নদীতে ড্যাম ও বাঁধ নির্মাণ করে রেখেছে সেগুলো কে বলবে। তাই দু’দেশের অভিন্ন নদীগুলো যৌথভাবে পরিদর্শন করে সব বাঁধ খুলে দিতে হবে। আত্রাই নদীতে যে ড্যাম করা হয়েছে তা দিয়ে পানি অন্য নদীতে সরিয়ে নেওয়া হয় না। কিন্তু তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে অন্যত্র পানি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।